Site icon The Bangladesh Chronicle

বন্ধ হলো সরকারি টাকায় হজে যাওয়া

ইনকিলাব ডেস্ক

 ১৩ মে ২০২৩

রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে গত বছর প্রথমবারের মতো শুধু বিমান ভাড়া নেয়ার পর এ বছর রাষ্ট্রীয় টাকায় হজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ পবিত্র হজ পালনে মক্কা-মদিনায় যান। এর পাশাপাশি সরকার ২০০ থেকে ৩০০ ধর্মপ্রাণ অসচ্ছল ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় টাকায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে হজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালার ২৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার প্রয়োজনীয়সংখ্যক অসচ্ছল ব্যক্তিকে হজ করিবার উদ্দেশ্যে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করিতে পারিবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এই সহযোগিতার পরিমাণ নির্ধারণ করিতে পারিবে।’ এর ভিত্তিতেই প্রতি বছরই ২০০ থেকে ৩০০ জন রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাচ্ছেন। কয়েক দশক ধরেই এই চর্চা চলে আসছে।

তবে সরকারি খরচে হজে যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দেয়। তালিকায় প্রকৃত অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেয়ে বঙ্গভবন, গণভবন, বিভিন্ন মন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি দলের নেতাকর্মীসহ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নিজ জেলার লোক বেশি থাকেন। এতে জনগণের করের টাকার সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

চলতি বছরও রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যেতে জোর তদবির শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব ও তাদের গানম্যান, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় খরচে পছন্দের লোক পাঠাতে কোটা দাবি করেছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্যরাও। তাদের বেশির ভাগ সদস্যই নিজ সুপারিশে অন্তত দু’জন করে হজে পাঠানোর সুযোগ চেয়েছিলেন। ফলে সরকারি টাকায় হজে যেতে আবেদনকারীদের নানামুখী চাপ ও তদবিরে নাজেহাল ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ দিকে প্রতি বছরই হজের খরচ বাড়ছে। এ কারণে গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্রথমবারের মতো বিমান ভাড়া দেয়ার নিয়ম চালু করে সরকার। গত বছর সরকারি খরচে হজে যেতে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া দিতে হয় ২৫৪ ব্যক্তিকে। এ বছর সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে হজে যেতে প্রায় সাত লাখ টাকার প্রয়োজন হচ্ছে; যা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকের জন্যই কষ্টকর। সে জন্য এ বছর দেশের মোট হজযাত্রীর কোটাও পূরণ হয়নি। আবার অনেকে নিবন্ধন করেও শেষ সময়ে তা বাতিল করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর সরকারি টাকায় হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, এ বছর কাউকে সরকারি টাকায় হজে পাঠানো হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। কী কারণে এ বছর কাউকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবেই জানেন। এবার হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে হজে যাওয়া নিয়েও নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এ কারণে এ বছর সরকারি খরচে হজে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু কি এ বছরই বন্ধ করা হয়েছে নাকি আগামীতেও বন্ধ থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত এ বছরের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী বছর এলে তখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Exit mobile version