বন্দীতে খালেদা জিয়ার ১৩ ঈদ

কারাবন্দী থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। করোনার ঝুঁকির সময়ে মানবিক বিবেচনায় বিদেশে না যাওয়া, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করা, বক্তব্য বিবৃতি না দেয়াসহ কয়েকটি শর্তে বাসায় চিকিৎসা নিতে অনুমতি দেয়া হয় তাকে। ৭৯ বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুস জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি।

বার বার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে গত প্রায় সাত বছরে পরিবারের পক্ষ থেকে অর্ধশতবার স্থায়ী জামিন চাওয়া হলেও মুক্তি মেলেনি। এবারের ঈদেও তাকে মুক্ত অবস্থায় পেলেন না পরিবারের সদস্যরা। এবারো খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায় গুলশান ফিরোজাতেই কাটছে ১৩তম ঈদ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়ার চারটি ঈদ কারাগারে, একটিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে, এভারকেয়ারে একটি ঈদ এবং বাসায় গৃহবন্দি অবস্থায় ছয়টি ঈদ কেটেছে। ২০১৭ সালের ২৬ জুন চীন মৈত্রী হলে সর্বশেষ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এই নেত্রী।

দলটির নেতাকর্মী বলছেন, দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় পূর্ণ স্বাধীন অবস্থায় ঈদ উদযাপনের বাইরে রয়েছেন এই সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রী। গৃহকর্মী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যদেরকে নিয়ে ঈদের দিন কাটে খালেদা জিয়ার। আদালতের শর্ত যুক্ত থাকায় হাইকমান্ডের নেতাদেরও সাক্ষাতের সুযোগ নেই। তবে ঈদের দিন রাতে দলের স্থায়ী কমিটির দুই-একজন সদস্য দলের পক্ষ থেকে দেখা করেন। জানা গেছে- শুধু টানা এবারই নন, এর আগে ১/১১ সরকারের সময় সংসদ ভবন এলাকায় সাব জেলে বন্দি থাকাকালে দুটি ঈদ কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালে কারাবন্দি হওয়ার পর ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড়ের পরিত্যক্ত পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি ঈদ পার করেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৯ সালের বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুটি ঈদ উদযাপন করতে হয় তাকে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া পর রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি ঈদ এবং গুলশানের ফিরোজায় সাতটি ঈদ কাটালেন।

এর আগে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হয়ে দুটি ঈদ চার দেয়ালের মধ্যেই কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। তখন তিনি ছিলেন সংসদ ভবন এলাকার একটি ভবন যেটাকে সাবজেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই সময় খালেদা জিয়ার মতো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও দুটি ঈদ কাটাতে হয়েছে বন্দী অবস্থায়। পাশাপাশি ভবনে ছিলেন দু’জন।

জানা গেছে, প্রতিবছর ঈদের দিন দুপুরে নিকটাত্মীয়দের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সারেন খালেদা জিয়া। এবারো তার ভাই শামীম ইসকান্দার, তার পরিবারের সদস্য ও তার আরেক ভাই মরহুম সাঈদ ইসকান্দারের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যরা খালেদা জিয়ার কাছে আসবেন। তারা দুপুরে একসাথে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এছাড়া ঈদের দিন খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকা তার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমানের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে ফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

আজ ঈদের দিন বেলা ১১টায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) কবর জিয়ারত করবেন। সন্ধ্যার পর বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানের ফিরোজায় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবেন।

বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি অবস্থায় ঈদ কাটানোর বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ অবস্থায় বিনা অপরাধে মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বন্দী রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। অথচ তিনি দেশের পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন। সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশের অধিকারহারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ থেকে বিচ্যুৎ হননি। তার উন্নত চিকিৎসা অতীব জরুরি। অথচ হিংসাশ্রয়ী সরকার গায়ের জোরে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। এই ঈদও পরিবার ছাড়া বন্দী অবস্থায় তাকে পালন করতে হবে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমার যারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছি, তাদের আবেগ অনুভূতি আর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর আবেগ অনুভূতির মধ্যে কোনো তফাত নেই। প্রতিটি মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার শূন্যতা অনুভব করি। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন এই সরকারের প্রতিহিংসামূলক নির্যাতন থেকে মুক্তি পান ও সবসময় সুস্থ থাকেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরো সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনো পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

nayadiganta