Site icon The Bangladesh Chronicle

বঙ্গবন্ধুর জন্মসাল বনাম ২০২০ সাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিবন্ধ লেখার ইচ্ছা বহু দিন থেকে লালন করে আসছি; কিন্তু কোনো দিন সাহস করে কলম ধরিনি। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে অনেক নিবন্ধ লিখেছি যেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু লেখা ছিল প্রথাবিরোধী। অর্থাৎ আওয়ামী লীগে থাকা অবস্থায় শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া এবং তারেক রসহমান সম্পর্কে যেমন ইতিবাচক লেখা লিখেছি; তেমনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পর্কে সমালোচনা করেছি। আবার বিএনপিতে এসে যেমন আওয়ামী নেতাদের সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলেছি তেমনি বিএনপি সম্পর্কে কোনো ছাড় দিচ্ছি না। লেখালেখি এবং কথা বলা সম্পর্কে আমার এই প্রথাবিরুদ্ধ অভ্যাস সত্ত্বেও কেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছু লিখতে সাহস পাইনি সে কথাই আজ আপনাদের বলব। আলোচনার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নিজের ব্যক্তিগত কয়েকটি ঘটনা বলে মূল আলোচনায় প্রবেশ করব।

প্রথম ঘটনাটি সম্ভবত ২০০২ সালের। আমি তখন ফরিদপুরের একটি সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছিলাম। গ্রামে গ্রামে ছোট পথসভা করতাম এবং বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে উঠান বৈঠক করে নিজের প্রার্থিতা, দলীয় রাজনীতি এবং আওয়ামী ভাবাদর্শের প্রচার চালাতাম। গ্রামের মানুষ সহজে যেসব কথা বোঝেন এবং যেসব কথা বললে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সেসব কথামালা দিয়ে সর্বাত্মক প্রচারণা চালিয়ে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য রাজনীতির মাঠ কষ্টসাধ্য করে তুলছিলাম। তো এই কাজ করতে গিয়ে একদিন বিস্ময়কর এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। একটি উঠান বৈঠকে আমি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যখন কথা বলছিলাম, তখন একজন বৃদ্ধ মাথা নিচু করে কাঁদছিলেন এবং ক্ষণে ক্ষণে মৃগী রুগীর মতো কাঁপছিলেন। আমি বক্তৃতা বন্ধ করে বৃদ্ধের কাছে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম আপনার কী হয়েছে?

আমার কথা শুনে বৃদ্ধের কান্না বেড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর কান্না থামলে তিনি জানালেন, বঙ্গবন্ধু একবার তাদের গ্রামে এসেছিলেন এবং তার কাঁধে হাত রেখে বহুক্ষণ খোশগল্প করেছিলেন। আমি যখন বঙ্গবন্ধুর কথা বলছিলাম তখন নাকি তার সেই কাঁধে অদ্ভুত এক শিরশির অনুভূতি হচ্ছিল।

বঙ্গন্ধুকে নিয়ে আমার দ্বিতীয় ঘটনা হলো, নবম সংসদে দেয়া একটি বক্তব্য যেখানে আমি বলতে চেষ্টা করছিলাম যে, কেন বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়। আমি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলাম তখন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা আবেগে এবং উত্তেজনায় পুরো সংসদ গরম করে তোলেন এবং বক্তব্য শেষে সবাই আমাকে ধন্যবাদ জানান। আমার সেই বক্তব্যটি কে বা কারা যেন ইউটিউবে ছেড়ে দেয় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। গত ১০ বছর ধরে সেই ভিডিওটি ভার্চুয়াল জগতের দর্শকরা যে কত কোটিবার দেখেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

উল্লিখিত দুটো ঘটনা এবং আরো বহু শত প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য ঘটনার কারণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কোনো কিছু লিখতে কেন ভয় পাই তা এবার আপনাদের বলব। প্রথম যে ঘটনাটি বলেছি, সেটি যদি আপনারা মূল্যায়ন করেন তবে বুঝবেন যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একশ্রেণীর মানুষের স্পর্শকাতর অনুভূতি ও বিশাল আবেগ রয়েছে। যেখানে আবেগ অনুভূতির বাড়াবাড়ি থাকে যেখানে বুদ্ধি-শুদ্ধি, যুক্তি কিংবা বিবেক প্রায়ই কাজ করে না। কাজেই আবেগবিরুদ্ধ কথা তা সে যতই সত্য হোক না কেন তা বলা বা লেখা যে কোনো লোকের জন্য বিপজ্জনক। দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। কারণ আমি যখন বক্তৃতা দিয়েছিলাম তখন আমিও নিদারুণ আবেগতাড়িত ছিলাম। ফলে একটি বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য, যুক্তিযুক্ত ও হৃদয়গ্রাহী করার জন্য যা যা করা দরকার আমি সেগুলোর সংমিশ্রণে বক্তব্যটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলাম। পরে যখন সেই বক্তৃতার তথ্য-উপাত্ত প্রেক্ষাপট এবং যুক্তিগুলো পর্যালোচনা করলাম তখন বুঝলাম যে, আমার বক্তৃতাটি ছিল শিশুতোষ রচনা যা কিনা শুনতে ভালো লাগে কিন্তু আগা মাথার কোনো মিল নেই এবং কোনো কিছু দিয়েই বিজ্ঞজনকে আমার বক্তব্যের বিষয়ে একমত করতে পারব না।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আমাকে দুটো কারণে যারপরনাই আশ্চর্য করেছে। প্রথম কারণ হলো একটি শিশুতোষ রচনা কেন সব আওয়ামী সংসদ সদস্যকে আবেগতাড়িত করল। দ্বিতীয়ত, বক্তব্যটি এ যাবৎকালে বহুজন দেখেছেন কিন্তু কেউই আমাকে বলেননি যে ওই তথ্য প্রাসঙ্গিক ছিল না এবং যে প্রেক্ষাপটে আপনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলার চেষ্টা করেছেন সেই প্রেক্ষাপটের গোড়াতেই গলদ অর্থাৎ হাজার বছর আগে কোনো বাঙালি ছিল না, বাংলা ভাষা ছিল না এবং বঙ্গ বাংলা ইত্যাদি নামে কোন দেশ বা জনপদ ছিল না। কাজেই বঙ্গ শব্দ নিয়ে যাদের আবেগ সুতীব্র তাদের কথা ভেবে বন্ধুবন্ধু সম্পর্কে নির্জলা সত্য এবং ঐতিহাসিক তথ্য সংবলিত নিবন্ধ লিখতে আমার মধ্যে ভয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমি যা লিখতে চাই তার জন্য যে তথ্য-উপাত্ত দরকার সেগুলো সংগ্রহ করা দুরূহ বিষয়। কিছু তথ্য হয়তো পাওয়া যাবে না, কিন্তু ঘটনাগুলো নিয়ে সুগভীর তদন্ত গবেষণা এবং পর্যালোচনা করে যেভাবে ইতিহাস রচনা করা হয় সে যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারিনি। যে যোগ্যতার কথা বলছি, সে বিষয়ে একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পাঠকদের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে। যেমন ধরুন, বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা তার মান মর্যাদা ও শান-শওকতের রোশনি উজ্জ্বলতর করার জন্য বলে থাকেন যে, তাদের পূর্বপুরুষ ধর্ম প্রচারের জন্য সুদূর পারস্য থেকে এ দেশে এসেছিলেন। কিন্তু কবে, কোথায় এবং কিভাবে তারা এসেছিলেন সে ব্যাপারে কোনো তথ্য যেমন নেই তেমনি কেউ এগুলো নিয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল দস্তাবেজ তৈরি করেছেন এমনটিও দেখিনি।

আমরা যদি ইতিহাসের আলোকে উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করি তবে দেখব, প্রথমত, পারস্য থেকে কোনো ধর্ম প্রচারক এ দেশে আসেনি। কারণ পারসিকরা অনাদিকাল থেকে শিয়া ধর্মাবলম্বী। আমাদের বাংলাদেশ যা ইতোপূর্বে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারতবর্ষ ছিল সেখানকার মুসলমানরা অনাদিকাল থেকে সুন্নি মতাবলম্বী। মূলত ইরাক, মরক্কো, ইয়েমেন এবং হেজাজের সুফি সাধকরা ধর্ম প্রচারার্থে আমাদের দেশে আসতেন। খোদ ইরান থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতে হাজার হাজার অগ্নি উপাসক দক্ষিণ ভারতে এসেছে মূলত ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য। ভারতের বিখ্যাত টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামসেদ জি টাটা ছিলেন পারস্য বংশদ্ভূত অগ্নি উপাসক। আজকের ইরান ছাড়াও আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বিস্তীর্ণ অংশ পারস্য সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ভারতের কালিকটে এবং বাংলাদেশে যখন সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ খ্রিষ্টানদের আধিপত্য ছিল তখন দলে দলে আর্মেনীয় খ্রিষ্টান যারা পারসিক হিসেবে পরিচিত ছিল, এ দেশে এসেছিল। ঢাকার আরমানিটোলা মূলত পারসিক আর্মেনীয় খ্রিষ্টানদের এলাকা ছিল।

কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর আদি বংশকে পারস্যের সাথে মেলাতে চান তবে তা ঐতিহাসিকভাবে ততটা সুনিপুণভাবে তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি দিয়ে মেলাতে হবে যা কিনা তার মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যথায় এ দেশে পারস্যের অধিবাসীরা আদিকালে যে ইতিহাস রচনা করেছেন সেগুলোর উপাখ্যান দ্বারা বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি ছাড়া কিছুই ঘটবে না।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি উপাধিতে ভূষিত করার মধ্যেও সমীকরণ ঘটাতে হবে। আমাদের এই ভূখণ্ডে কবে থেকে বাংলা বলা চালু হলো, কবে থেকে বাংলা লেখা চালু হলো এবং কবে থেকে এ দেশবাসী বাঙালি বলে পরিচিতি পেল এসব পরিচয়ের প্রাচীনত্ব নির্ধারণ না করে এবং সেই প্রাচীনত্ব দলিল দস্তাবেজ দ্বারা প্রমাণের ব্যবস্থা না করে পাইকারিভাবে হাজার বছর বললে তা কোনো দিন ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে না। বাংলা ভাষা নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামল বিশেষ করে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের জমানা থেকে আজ অবধি দুনিয়াব্যাপী ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। আমাদের দেশে অথবা পশ্চিম বঙ্গে যত না গবেষণা হচ্ছে তার চেয়ে শত শত গুণ বেশি মানসম্পন্ন গবেষণা হচ্ছে পশ্চিমা দুনিয়ায় এবং সব গবেষণার হালনাগাদ উপসংহার হলো- ভাষাটির বয়স সাত শ’ বছরের বেশি হবে না।

বাঙালির রাজনীতি নিয়ে যদি কেউ ইতিহাস রচনা করতে চান তবে এই জাতির জাতিসত্তা, শ্রেণী বিভাগ এবং জনগণের মনমানসিকতা নিয়ে বিস্তর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলে কেন সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক হতে পারল না। কেন শ্রী চৈতন্য দেব সেই পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বৈষ্ণব ধর্ম প্রতিষ্ঠার পর তার ধর্মমতটি হিন্দুত্ববাদের ওপর প্রাধান্য পেল এবং সমগ্র ভারতবর্ষে এই ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বর্ণ হিন্দুদের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেল এবং এরই সাথে তাল মিলিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কেন বাড়ল! শ্রী চৈতন্য যাকে আমাদের দেশের লোকজন নিমাই সন্ন্যাসী বলে জানে তার পিতা জগন্নাথের নিবাস ছিল সিলেট জেলায়। তিনি পরে নদীয়ায় চলে যান এবং সেখানেই নিমাইয়ের জন্ম হয়। নিমাই তথা শ্রী চৈতন্য এবং তার প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্মের সাথে বাঙালির জাতিসত্তা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে অন্তমিল তা না জেনে বঙ্গবন্ধুর জীবনী রচনা করলে সেই রচনার কোনো ঐতিহাসিক মূল্য থাকবে না। বঙ্গবন্ধু যে বছর জন্মেছিলেন সে সময়ে বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং রাজনীতির অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো না জানলে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব অনুমান করা সম্ভব নয়। বাঙালি সমাজে সেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে তিনটি শ্রেণী ছিল যথা- ভদ্রলোক, বেনিয়া এবং অসভ্য। সাধারণত নবাব, বড় জমিদার যারা কোনো কাজ করতেন না তাদের বলা হতো ভদ্রলোক। ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো দিন ভদ্রলোক বলে বিবেচিত হতে পারত না। অন্য দিকে, এই দুই শ্রেণীর লোকজন ছাড়া বাকি সব শ্রেণীপেশার লোকদের বলা হতো অসভ্য। ভারত শাসন আইন পাস হওয়ার পর জাতীয় রাজনীতিতে যারা নীতিনির্ধারক হলেন তারা প্রায় সবাই ভদ্রলোক গোত্রের মানুষ। ফলে সর্বভারতীয় রাজনীতি এমনকি পাকিস্তান জমানার রাজনীতিতে বাঙালির চার শ’ বছরের পুরনো সামাজিক ভেদাভেদের দেয়াল ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি।

সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে বাঙালি সমাজের ভদ্রলোকেরা কেবল বংশ গৌরবের জোরে অনেক তুখোড় যোগ্য রাজনীতিবিদকে পদানত করে নেতৃত্বের জায়গাগুলো দখল করে নিলেন। বগুড়ার নবাব মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভাতৃদ্বয়, করটিয়ার জমিদার পন্নী পরিবার। নওয়াব আলী চৌধুরীর পরিবার, ঢাকার নবাব পরিবার এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরুখ্যাত আবুল হাসিম, শেরেবাংলা ফজলুল হকদের মতো নেতা টিকতে পারেননি। একইভাবে পাকিস্তান জমানায় ফরিদপুরের মোহন মিয়া, লাল মিয়া, চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী, ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিম উদ্দিন, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, নোয়াখালীর আবদুল হামিদ চৌধুরীদের কাছে মওলানা ভাসানীরা টিকতে না পেরে ভদ্রলোকের সমাজ থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ধরে এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেন। সুতরাং বাঙালি সমাজের অতোসব উপাখ্যান পাশ কাটিয়ে যদি কেবল বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় তবে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকবে না এবং লোকজন তা মনেও রাখবে না।

ইদানীংকালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখালেখি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত শত নয়, হাজার হাজার ভারী ভারী পুস্তক রচনা হচ্ছে। সব বইয়ে প্রায় একই কথা, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, কারাবরণ, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী বলে বঙ্গবন্ধুর মহত্ত্বও কৃতিত্ব বিচার করার চেষ্টা করা হয়। এসব কাণ্ডকারখানা দেখে আমার ভয় বরং বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ আমি জানি অতীতের সেসব কর্ম দ্বারা বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি প্রমাণ করা সম্ভব নয়। আমার মতে, যখন কারো মনে হয়, ‘কর্তা না হলে কর্মের সৃষ্টি হতো না’ ঠিক তখনই কর্তা মুখ্য হয়ে ওঠেন। অন্য দিকে কর্ম দিয়ে যদি কর্তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় তবে কর্তার চেয়ে কর্মই বড় হয়ে ওঠে। ভারতের নেহরুর প্রধানমন্ত্রিত্ব, মহাত্মা গান্ধীর রাজনীতি, পাকিস্তানে জিন্নাহ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা এবং কিউবাতে ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে যদি কেউ চিন্তা করেন তবে দেখবেন ওই সব মহামানব না হলে তাদের পদ-পদবি-রাষ্ট্র এবং কর্মের কোনো উদ্ভবই হতো না। তারা কর্ম সৃষ্টি করেছেন, কর্ম তাদেরকে সৃষ্টি করেনি। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য আমি এমন সব তথ্য খুঁজছি, যা দিয়ে তাকে তার কর্মের থেকেও বড় বলে প্রমাণ করা যায়।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

Exit mobile version