ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হলেন শামীম

মো. শামীম কাওছার
মো. শামীম কাওছারছবি: সংগৃহীত

নিজের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের খরচের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন মো. শামীম কাওছার। মাসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা আয় হলেও নির্দিষ্ট পরিচয় না থাকায় শুনতে হতো কটু কথা। তাই একটা পরিচিতির জন্য শুরু করেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন মো. শামীম কাওছার।

একটা ওয়েবসাইট কীভাবে তৈরি হয়, কীভাবে ওয়েবসাইটে লেখা ও ছবি প্রকাশ পায়—এসব জানার আগ্রহ থেকেই ওয়েব ডেভেলমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন শামীম কাওছার। ওয়েব ডেভেলমেন্ট বিষয়ে পড়াশোনার সময় জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের কথা। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ দিতে পারত না। তাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। সফলতাও পেয়ে যান দ্রুত।

২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন শামীম। একা মাকে নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার আয় দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০২০ সালে মহামারি করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর আপওয়ার্কে কাজ কমতে থাকে। বিদেশি ক্লায়েন্টরা কাজ কমিয়ে দেয়। অনেক প্রজেক্ট হাতছাড়া হয়ে যায়।

শামীম বলেন, সমাজের মানুষ এখনো চাকরিকে প্রাধান্য দেয়। করোনা মহামারিতে গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে চাকরি পেলাম না কেন, এ রকম কটাক্ষ শুনতে হতো। গ্রামের মানুষ মাকে বলত, ‘ও ভার্সিটি পড়ে কী করেছে? চাকরিও পায় না একটা। ওকে বিয়ে দিয়ে দাও। ঘরে বসে টাকা কামানো কোনো ভালো কথা না, ওসব আমরা বুঝি।’

শামীম কাওছার আরও বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা আছে। কোভিড দেখিয়েছে যে, একমাত্র সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা আছে এবং মাস শেষে নির্দিষ্ট বেতন পাওয়া যায়। এ ছাড়া আগের তুলনায় এখন সিঙ্গেল ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পাওয়ার হার কম। সাধারণত অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পাচ্ছেন।

এসব কারণে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেন বলে জানান শামীম কাওছার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয় তাই এই চাকরির জন্য উঠেপড়ে লাগি। গত বছর সহকারী পরিচালক পদে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করি। এবার এডি পদে সফল হয়ে নিজের একটা পরিচয় পেলাম।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে লিখিত অংশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শামীম কাওছার। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে লিখিত পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তারপর ভাইভা। কারণ, লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলে চাকরির পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা যায়। লিখিতের বেশি নম্বর ভাইভায় প্রভাব ফেলে। তাই লিখিত অংশে বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য জোর দিতে হবে।

যাঁরা এবার সহকারী পরিচালক পদে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে শামীম কাওছার বলেন, প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রশ্ন বুঝে প্রস্তুতি নেওয়া। যাঁরা প্রশ্ন করেন, তাঁদের সাইকোলজি ধরে প্রস্তুতি নিলে ২০ শতাংশ বিষয় ভালোভাবে পড়লে ৮০ শতাংশ নম্বর পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আগের বছরের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলো ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে। লিখিত অংশের জন্য গুছিয়ে লেখার অভ্যাস করতে হবে। এই অংশে প্রশ্ন তেমন কমন আসে না।