৩০ এপ্রিল ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
বহুল আলোচিত ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে আটক হওয়া সেলিম প্রধানের মামলার রায়ে আওয়ামী আদালতের বিচারকের মুখে উচ্চারিত হয়েছে ন্যায়ের বাণী। বিচার বিভাগের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ফ্যাসিবাদের অনুগত বিচারক নসিহত করেছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। রায় দিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিচারক নসিহত করেছেন দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার জন্য। বলেছেন, দাওয়াত দিলে যাবেন না। জেনেশুনে কারও দাওয়াতে যাওয়া মানে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেওয়া। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
রোববার (৩০শে এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক বদরুল আলম পৃথক দুই ধারায় এ সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সেলিম প্রধানকে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় শুনতে সেলিম প্রধানের রাশিয়ান স্ত্রী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে সেলিম প্রধানকে আদালতে নেওয়া হয়। রায় ঘোষণা শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
মানিলন্ডারিং আইনে চার বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাকে আরও ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইনে চার বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেলিম প্রধান র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছিল। এই উপ-পরিচালকই মামলাটি তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত তার নামে মোট ৫৭ কোটির বেশি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পান। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালত সেলিমের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্যাসিনো খেলে সেলিম প্রধান মোট ৫৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার। ক্যাসিনো খেলে অর্জিত ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাচার করেছেন থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে।
সেলিম জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং পেপার্সের চেয়ারম্যান। এই কোম্পানিতে তার ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৬৯ হাজার শেয়ারের বিপরীতে এখানে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা। তবে সেলিম প্রধানের নামে শেয়ার মানি ডিপোজিট পাওয়া গেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫০ টাকা। এই টাকা তিনি অর্জন করেছেন অবৈধভাবে।
প্রিন্টিং পেপার্স কোম্পানি ২০১০ সালে মুনাফা করে ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ টাকা। ২০১১ সালে মুনাফা করে এক কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৭২ টাকা। এখান থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে আট কোটি টাকা ঋণ নেন বলে সেলিম প্রধান তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। তবে এই কোম্পানি থেকে কীভাবে ঋণ গ্রহণ করেছেন এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র নেই তার কাছে।