বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারি বিমান সংস্থাটির ফ্লাইট অপারেশনে এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল থাকায় তাদের এই অসন্তোষ। গত রোববার ২০ জন পাইলটের একটি প্রতিনিধিদল বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাদের ৫ আগস্টের আগে বহালদের অবিলম্বে ফ্লাইট অপারেশনের ম্যানেজমেন্টের পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছেন।
বিমানের বোর্ডের মেম্বার কর্নেল শাহরিয়ার ও বিমানের প্রধান নির্বাহী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. সাফিকুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করে অভিযোগ জানান তারা। পাইলটদের দাবি, দ্রুত ফ্লাইট অপারেশন বিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে এবং ম্যানেজমেন্টের পদ থেকে ফ্যাসিবাদীদের দ্রুত সরিয়ে যোগ্য ম্যানেজমেন্ট বসাতে হবে।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) একজন সদস্য আমার দেশকে বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা ফ্লাইট অপারেশনে রাজত্ব করে চলছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন তাপস, চিফ অব প্লানিং অ্যান্ড সিডিউলিং ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসেন, পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা, চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন এনাম, ডেপুটি চিফ অব সিডিউলিং ক্যাপ্টেন মইনুল, ডেপুটি চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন সুমাইলা ও ডেপুটি চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন ইন্তেখার দিনার।
বিমানের একজন পাইলট জানান, ক্যাপ্টেন ইশতিয়াকের বাবা বিমানের সাবেক পাইলট ক্যাপ্টেন মনোয়ার। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ক্যালেন্ডার রয়েছে। ২০২৩ সালের বিমানের ক্যালেন্ডারে তার ছবি শেখ মুজিবের সঙ্গে ছাপা হয়। এ সময় বিমানের প্রধান ভবনের বিভিন্ন জায়গায় শেখ মুজিবের সঙ্গে ক্যাপ্টেন মনোয়ারের ব্যানারও দেখা যায়। তিনি শেখ রেহানার সঙ্গে ২৮টি ভিভিআইপি ফ্লাইট করেছেন। শেখ রেহানার সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের ফ্লাইটও ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচালনা করেন। এরপরও তারা বিমানের ফ্লাইট অপারেশনের ম্যানেজমেন্টে রয়েছেন।
ওই পাইলট জানান, ক্যাপ্টেন তাপস ক্যাপ্টেন সাহাবের ছেলে। ক্যাপ্টেন সাহাব বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গালিগালাজ করেন। তারাই এখনও বিমান চালাচ্ছেন। গত ১৫ বছর যেসব স্বৈরাচারের দোসররা ঘুরেফিরে ছিল তারা এখনো ৫ আগস্টের পর বিমানের ম্যানেজমেন্টে রয়েছেন। এটি নিয়ে চরম অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এদিকে গত রোববার বলাকায় পাইলটরা এর প্রতিবাদ করতে যান। এই ধারার কেন পরিবর্তন হচ্ছে না- সেটি নিয়ে অসন্তোষের একপর্যায় তারা বাপার বর্তমান সভাপতি ক্যাপ্টেন বাসিত মাহতাবকে বিষয়টি জানান। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন না দেখে তারা সরাসরি বিমানের প্রধান নির্বাহী ও বিমান বোর্ডের মেম্বার কর্নেল শাহরিয়ারের শরণাপন্ন হন।
বাপার একজন সদস্য আমার দেশকে বলেন, ইশতিয়াকের স্ত্রী ক্যাপ্টেন শাহানা আগে স্বেচ্ছায় বিমান ছেড়ে চলে যান। এরপর সম্প্রতি কোনো সার্কুলার ছাড়া তাকে আবার বিমানে পুনর্বহাল করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর সেম্যুলেটরে আছেন। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে তাকে সেম্যুলেটরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের দিকে বিমান অভিজ্ঞ পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিলে তখন ক্যাপ্টেন শাহানা অংশ নিলেও নির্দিষ্ট আওয়ার না থাকার কারণে (অভিজ্ঞতা) তখন তাকে নেওয়া হয় না। পরে পিআইএল মামলা করলে পুরো নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিত করে দেয়।
ফ্লাইট অপারেশন ম্যানেজমেন্ট পাইলটদের ওপর সব সময় ছড়ি ঘুরায় মন্তব্য করে একজন পাইলট বলেন, তাদের কথা না শুনলে প্রমোশন হয় না, ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয় না, এমনকি ফ্লাইটও দেওয়া হয় না। অনেক পাইলট এ কারণে বিমান ছেড়ে অন্য এয়ারলাইন্সে চলে যাচ্ছেন।
বিমানের প্রধান নির্বাহী ড. মো. সাফিকুর রহমান এই মুহূর্তে দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল মাসুদ খান আমার দেশকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই।’