Site icon The Bangladesh Chronicle

ফেসবুকে রাজনীতিতে আসা নিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যায় আলোচনার ঝড়

ফেসবুকে রাজনীতিতে আসা নিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যায় আলোচনার ঝড়

BBC Bangla ২৬ নভেম্বর ২০১৮

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption মাশরাফি বিন মর্তুজা রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে ফেসবুকে ব্যাখ্যা দেয়ার পর চলছে নানা আলোচনা।

মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। তাঁর রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে সরগরম দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

নির্বাচনের ডামাডোলে প্রাথীরা স্বাভাবিকভাবে আলোচনার ইস্যু হলেও মাশরাফির ব্যাপারটা ভিন্ন।

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের অংশ হয়ে থাকা মাশরাফিকে ক্রিকেটভক্তদের বাইরেও অনেকেই তার নেতৃত্বগুণ ও প্রভাববিস্তারকারী চরিত্রের জন্য আদর্শ হিসেবে ভেবে থাকেন।

তবে এখন যখন মাশরাফি রাজনীতির ময়দানে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে, তখন মাশরাফিকে নিয়ে জনমানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

মাশরাফি কেনো রাজনীতিতে, তিনি নিজে তাঁর ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিলে সেখানে প্রচুর মন্তব্য আসে।

আরো পড়ুন:

মাশরাফির অবসর ভাবনা: ক্রিকেট নাকি রাজনীতি?

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিলেন মাশরাফি

মাশরাফির সিদ্ধান্ত নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা

অনেকে নিজস্ব মন্তব্যে মাশরাফির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ছবির কপিরাইট মাশরাফির ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া
Image caption অনেকে নিজস্ব মন্তব্যে মাশরাফির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় সেখানে প্রায় ৩৬ হাজার মন্তব্য ছিল।

শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে অংশ নেয়ার কারণে মাশরাফিকে নেতিবাচক মন্তব্য পেতে হয়েছে তাঁর পেইজে। তাদের মধ্যে কিছু বাছাইকৃত মন্তব্য এখানে দেওয়া হলো।

ফখরুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি লেখেন, “জগতে মানুষ যে কত রঙের হয় এই আপনাকে দেখে আরেকবার বুঝলাম। ইমরান খান হওয়ার যদি এতই সখ জাগবো তো নিজে আলাদা একটা দল গঠন করলেই ত পারতেন। ঘুরেফিরে চ্যতনার ট্যাবলেট আপনেও খাইলেন।”

শামসুদ্দিন নামে এক ব্যাক্তি মন্তব্য করেন, “রাজনীতি করতে তো কেউ নিষেধ করে নাই। একটি ন্যাশনাল টীমে থাইকা, পাবলিক মানি থেকে বেতন-ভাতা-প্রটোকল সুবিধাদি নিয়া একটা দলের হয়ে ইলেকশান করা নৈতিকতা বিরোধী।”

যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। যেখানে কোনো বেতন-ভাতা জনগণের অর্থ থেকে আসে না।

জুয়েল মাহমুদ বলেন “দোয়া করছি রাজনীতির মাঠে প্রথম বলেই যেনো আউট হয়ে একই সাথে রাজনীতি এবং খেলার মাঠ থেকে বিদায় হয়ে জাতীকে আপনি এবং আপনার প্রিয় নেত্রী উদ্ধার করবেন। নিপাত যাক জননেতা মাশরাফি।”

“…মাশরাফিই একমাত্র প্লেয়ার যার কোন হেটার্স ছিল না। কিন্তু রাজনীতিতে মাশরাফির আসার কথা শুনে কিছু লোক তাকেও গালাগাল করছে। আজ মাশরাফি যদি আওয়ামীলীগের না হয়ে সেই লোকগুলোর দলে যেতো, তাহলে কি তারা গালাগালি করত?…,” এমন মন্তব্য করেন জাকারিয়া জ্যাক নামের একজন।

নেতিবাচক মন্তব্যের পাশাপাশি ইতিবাচক মন্তব্যের সংখ্যাও কম নয়

ছবির কপিরাইট Raihan Masud
Image caption রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যার পর এমন কমেন্ট আসতে থাকে।

মাহামুদুল হাসান নামের একজন আশা প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, “একজন মাশরাফি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শত শত মাশরাফি রাজনীতি অঙ্গনে আসবে। এবং এই মাশরাফিদের হাত ধরে সুনাম নষ্ট হওয়া প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্তি পাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।”

মাসুদ রানা সেই ফেসবুক পোস্টের নিচে লেখেন, “আপনাকে ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই, কয়েকজন হয়ত কটু কথা বলবে কিন্তু নড়াইলের উন্নয়ন দেখে তাদের মুখ হয়ে যাবে বিশ্বাস করি… ক্রিকেটার মাশরাফি-কে যতটা ভালোবেসেছি,লিডার মাশরাফি কেও ততটাই ভালোবাসি…”

মূলত কী লেখা মাশরাফি বিন মর্তুজার সেই ফেসবুক পোস্টে?

মাশরাফি বিন মর্তুজা আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন পত্র কেনার পর থেকেই তাঁর পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরণের মন্তব্য শোনা গিয়েছে।

তাই মাশরাফি কেনো রাজনীতিতে এলেন এবং আওয়ামী লীগেই বা কেনো যোগ দিলেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাশরাফি।

মাশরাফি বলছেন, “ক্রিকেট খেলতে খেলতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যতটুকু সামাজিক কাজ করেছি; আমার মনে হয়েছে, সেটুকুই যথেষ্ট নয়। আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ খুঁজেছি সবসময় এবং রাজনীতি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিচ্ছে।”

সেই স্ট্যাটাসে তিনি এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “দুটি বল করে, আপনাদের কয়েকটি আনন্দের মূহুর্ত উপহার দিয়ে, দু’জনকে জড়িয়ে ধরেই যদি ভালো মানুষ হওয়া যায়, তাহলে স্রেফ এরকম ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না।”

“সত্যিকার অর্থেই আমি কেমন মানুষ, আমার বিশ্বাস, সেটি বিচার করার সময় সামনে। যদি আমি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারি এবং আমার দল সরকার গঠন করে, তার পর আমার কর্মেই ফুটে উঠবে আমি কতটা ভালো মানুষ।”

সাবেক ক্রিকেটাররা কী বলছেন?

রাজনীতিতে আসা বা না আসা মাশরাফি বিন মর্তুজার একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা বলে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ।

বিবিসি বাংলাকে মি: ফারুক বলেন, “খেলায় এর প্রভাব খুব বেশি পড়বে বলে মনে হয়না। মাশরাফির চরিত্রটাই এমন যে খুব লড়াকু, সমালোচনায় ভেঙ্গে পড়ার মতো নন তিনি।”

তবে মি: ফারুক তার ব্যক্তিগত অভিমত দেন এভাবে, “হয়তো খেলা শেষ করে আসলে ব্যাপারটা ভালো হতো আমার মনে হয়, তবু শেষ পর্যন্ত এটা মাশরাফির ইচ্ছা।”

“যেহেতু খেলোয়াড়ি জীবনও প্রায় শেষের দিকে এবং এরপরের নির্বাচন আসতে আরো ৪-৫ বছর সময় অপেক্ষা করতে হতো সেক্ষেত্রে এবার না হলে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে হতো।”

Exit mobile version