Site icon The Bangladesh Chronicle

ফাহিম স্যার, শুভ জন্মদিন

ফাহিম স্যার, শুভ জন্মদিন – ছবি : সংগৃহীত


‘বিসিবির অফিসে শেষদিন।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।’

ছয় শব্দের ক্ষুদে এই চিরকুট ‘ফেসবুক’ নামক ডাকবাক্সে ফেলার সাথে সাথে বিষণ্নতার কালো মেঘ যেন দানা বাঁধে বাংলার ক্রিকেটে। বাংলার ক্রিকেটের সব থেকে বর্ণাঢ্য রঙিন চারিত্রটা যেন হঠাৎই সাদা-কালো মলিন! এত দিনের সম্পর্ক শেষে এমন দিনও দেখতে হবে, কে ভেবেছিল কবে? ১৪ বছরের সম্পর্কটা শেষ হয়েছিল ছোট্ট এক বার্তাতে।

বিদায়ের ঘোষণাটা আগেই দিয়েছিলেন, সেদিন অধ্যায়টা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে বেশ আড়ম্বরতার সাথেই বিদায় দেয়া হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাতিঘর খ্যাত সবার প্রিয় ‘ফাহিম স্যারকে’। ছিল শুভেচ্ছা স্মারক আর ফুলের তোড়া। যদিও দীর্ঘ এই ছুটে চলায় পথটা ফুলের ছিল না৷ তবে ফুল ফুঁটাতে তিনি মানতেন না কোনো বাধা।

প্রায় সব বড় তারকারই দুঃসময়ে ছুটে যাওয়ার একটা ঠিকানা থাকে। আছে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদেরও। নাজমুল আবেদীন ফাহিম তাদের সেই নির্ভরতার জায়গা। ক্রিকেটারদের অভিভাবক বলা যায় তাকে। দুঃসময়ে শেষ ভরসার স্থল প্রিয় ফাহিম স্যার! আজকের ফুটে ওঠা ফুলগুলোর কলিগুলো যে তিনিই ফুটিয়েছিলেন!

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কোচ বলা হয় তাকে। বিকেএসপিতে কাজ করেছেন ১৭ বছর। শত ক্রিকেটার তৈরী করে ২০০৫ সালে যোগ দিয়েছিলেন বিসিবিতে। গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে কাজ করেছেন যুগ ধরে। পাইপলাইনে একের পর এক ক্রিকেটার তুলে এনেছেন প্রতিভা বাছাই করে। সত্যিকার স্বর্ণ তো খাঁটি স্বর্ণাকারেই চিনে। তাই তো সাকিব, মুশফিকরা আজ লাল-সবুজ আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

তবে বড় ভুলটা ছিল, আপস করতেন না তিনি। হোক তা অন্য কেউ কিংবা বিসিবি। তার মুখে না আটকানো কথাতে, অনেকেরই আঘাত লাগত স্বার্থে। ফলে গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে মেয়েদের ক্রিকেটে, কিন্তু সাফল্য যদি থাকে কপালে; সাধ্যি কার আটকায় তাতে? কিন্তু শেষ বছরে সব দায়িত্ব তুলে নেয়া হয় তার হাত থেকে। বিনা পদে, বিনা দায়িত্বে কাজ করছিলেন বিসিবি’র সাথে। কিন্তু যারা পৃথিবী বদলাতে চায়, তারা কী করে ঘরে বসে থাকে!

তাই ফিরে এসেছিলেন সেই পুরনো ঠিকানায়৷ বিকেএসপিতে গিরে দায়িত্ব নিয়েছেন পুনরায় সাকিব-তামিম গড়ার। গড়বেনও হয়তো, তবে না গড়লেও ক্ষতি নেই। এখন পর্যন্ত যা করেছেন তার জন্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকে হাজারো বছর মনে রাখবে। আর তার আপসহীনতা তাকে নিয়ে অনুপ্রেরণা দেবে।

অবাক হলেও সত্য, বিসিবি’র দায়িত্বে থাকা কালে ক্লাব ক্রিকেটেও কখনো কোচিং করাননি তিনি। কারণ, বিসিবির দায়িত্বে থেকে ক্লাব ক্রিকেটে কোচিং করানোটায় একটা পক্ষপাতিত্ব; একটা স্বার্থ নিজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও কখনো চলে আসে বলে। অথচ, আজ- এখনো বিসিবির উচ্চপদস্থ কতো কর্মকর্তারা একেকজন একাধিক ক্লাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত!

আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই মহান মানুষটার জন্মদিন। ক্রিকেটের মহান এই কারিগরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। শুভ জন্মদিন স্যার!

Exit mobile version