===============================
জীবনে ঠাট্টা মশকরা -আনন্দ-বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না । তবে জীবনের গুরুগম্ভীর দিক গুলো নিয়ে হেলাফেলা বা ঠাট্টা মশকরা করা উচিত না । এসব বিবেচনাতেই একেক উৎসবের একেক মেজাজ তৈরি হয়েছে।
আনন্দ বিনোদনের জায়গাগুলোকে গুরুগম্ভীর বানিয়ে ফেলা অনুচিত । তেমনি গুরুগম্ভীর জায়গা বা অনুষ্ঠানগুলোকে হাল্কা বানিয়ে ফেলাও অত্যন্ত বেমানান লাগে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনভোকেশনে এসে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ পুরো জাতিকে আবারো চরমভাবে বিনোদিত করেছেন । মিডিয়া অত্যন্ত আহ্লাদ ভরে এই সংবাদটি জাতিকে জানিয়েছেন ।
আমাদের মহামান্য প্রেসিডেন্ট রসিক হলেও অত্যন্ত বৈষয়িক। সময়ে সময়ে জাতিকে এই কিছিমের বিনোদন দেয়ার জন্যে তিনি যতটুকু চেষ্টা করেন, তার চেয়ে অর্ধেক চেষ্টাও যদি করতেন জাতিকে স্বস্তি দেয়ার জন্যে – তবে এই জাতির ভাগ্য অনেক বদলে যেতো ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন একটা গুরু গম্ভীর বিষয় । এটা এলামনাইদের স্মৃতিচারণের কোনও হাল্কা উৎসব নয় ।
সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছডিযে পড়ার ছাড়পত্র দেয়ার দিন এটি । এই দিবসটি প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ।
মাথায় চারকোনা ক্যাপ এবং গায়ে কালো বর্ণের গাউনটি পরানো হয় সেই গুরুগম্ভীর পরিবেশ বা ভারিক্কি সৃষ্টি করার জন্যে। এটি পরে হেসে গড়াগড়ি করলে পুরো অনুষ্ঠানটি হাস্যকর কিংবা জোকারদের প্যারেড বলে মনে হয়।
কনভোকেশনগুলোতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মটিভেশনাল স্পিচ । যা একজন শিক্ষার্থী তার মনের মধ্যে আজীবন গেঁথে রাখে । এই মটিভেশনাল স্পিচের স্বাদ ঠাট্টা মশকরার চেয়ে কোনও অংশে কম হওয়ার কথা নয় । পাশের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্দুল কালামের প্রতিটি কথা আমাদের রসিক প্রেসিডেন্টের প্রতিটা ঠা্ট্টা মশকরার চেয়ে কম আকর্ষণীয় ছিল না ।
সাপে কাটা রোগীর যেমন জিহ্বার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় , সম্ভবত আমাদের স্বাদ এবং অনুভূতিও তেমনি করে নষ্ট হয়ে গেছে । মিডিয়ার আহ্লাদ এবং জনগণের একটা অংশের উচ্ছাস দেখে মনে হচ্ছে , ভবিষ্যতে বঙ্গভবনে একজন আব্দুল কালামের চেয়ে একজন গোপালভাঁড়কেই আমাদের বেশি দরকার ।
তিনি অত্যন্ত আহ্লাদ ভরে জানিয়েছেন – ছাত্র হিসাবে তিনি মেট্রিকে থার্ড ডিভিসন পেয়েছেন , ইন্টারে লজিকে রেফার্ড পেয়েছিলেন । যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ফর্ম তোলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন নি , সেখানেই তিনি আজ চ্যান্সেলর হিসাবে কনভোকেশনে এসেছেন !
এটা একজন ব্যক্তি হিসাবে উনার সৌভাগ্য নাকি একটি জাতি হিসাবে আমাদের দুর্ভাগ্য – সেটা মালুম করতে বোধ হয় আর বেশি দিন লাগবে না ।
কারণ প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর কৃতিত্ব তার ছাত্র জীবনের চেয়ে খুব বেশি উজ্জল নহে । কিছুদিন আগে তিনি যে প্রক্রিয়ায় এবং যে মানের একটি নির্বাচন কমিশন জাতিকে উপহার দিয়েছেন – তাতে তিনি টেনেটুনেও পাশ করতে পারেন নি । অর্থাৎ দেশের তেত্রিশ ভাগ মানুষও এটাকে সমর্থন করে নি । স্বাধীনতার পর যে জায়গায় ছিলাম , তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত নেতৃত্ব জাতিকে আজ সেই পয়তাল্লিশ বছর পিছনে আমাদেরকে নিয়ে গেছে । “এক নেতা এক দেশ , অমুকের বাংলাদেশ ” শ্লোগানটি হুবহু ফিরে এসেছে ।
তাঁর এই সহজ সরল স্বীকারাক্তি সামনে বসা শিক্ষার্থী কিংবা পুরা জাতির জন্যে কোনও অনুপ্রেরণার বাণী তুলে ধরছে না । বরং জীবনের সব পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী পেয়েও এবং ছাত্রী হল বা ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ইভ টিজিং করেও কীভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় – সেদিকেই যুব সমাজকে প্রলুব্ধ করছে ।
ম্যাসেজটি অত্যন্ত পরিস্কার , লেখাপডায় ফায়দা নেই । ফায়দা অন্য জায়গায় ।
মনে হচ্ছে , নাজমুল আলম এবং বদরুলরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক ! অন্য কিছু লাগবে না , একটু হাসি মশকরা জানলেই হবে । প্রেসিডেন্ট যুবক বয়সে পডালেখা না করে ছাত্রী হোস্টেলের সামনে ঘুরঘুর করেছেন বলে তা হয়েছে মশকরা , একই কর্ম আজকের বখাটেরা করলে তা হয়ে যায়
ইভ-টিজিং!
কাজেই মহামান্য প্রেসিডেন্টের এই সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে জাতির আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই – বরং আতংকিত হওয়ার অনেক কিছু রয়েছে ।