Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই এবং মাটিহারি

প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই এবং মাটিহারি – ছবি : সংগ্রহ

সম্প্রতি ববি হাজ্জাতের ‘প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই’ উপন‍্যাস নিয়ে যেভাবে বাংলা একাডেমি বইমেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, খবরটা দেখে কেনিয়ার লেখক গুগি ওয়া থিয়ঙ্গোর ১৯৮৬ সালে কেনিয়ায় প্রকাশিত ‘মাটিহারি’ উপন‍্যাসের কথা মনে পড়ে গেল। এই উপন‍্যাস সম্পর্কে গুগি বেশ মজার একটা গল্প করেছিলেন তার ‘শিল্প ও রাষ্ট্র : সম্পর্কের টানাপোড়েন’ প্রবন্ধে। গুগি কী লিখেছিলেন ওই প্রবন্ধে সেটা জানার আগে মাটিহারি উপন‍্যাসের গল্পটা খুব সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

মাটিহারি নামে এক লোক, নতুন করে তার দেশে জীবন শুরু করার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শুরু করতে যেয়ে দেখলেন, তার দেশ যেভাবে দুর্নীতি, আতঙ্ক আর দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে গেছে, তার পক্ষে নতুন করে জীবন শুরু করা আর সম্ভব না। উপন‍্যাসের এটাই মূল মেসেজ।

গুগির প্রবন্ধের মূল বিষয় ছিল শিল্পকর্ম ও রাষ্ট্রের মধ‍্যে যে নিরন্তর দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েন চলে সেটা নিয়ে। তাই তিনি সেখানে বলছেন, রাষ্ট্রের কাছে অনেক উত্তর এবং প্রায় কোনো প্রশ্ন নেই বললেই চলে। রাষ্ট্র যত স্বেচ্ছাচারী হবে, ততই সে নিজেকে কম প্রশ্ন করবে। তত কম অন‍্যের প্রশ্ন শুনতে চাইবে। প্রশ্ন করলে একজন লেখকের কী অবস্থা হতে পারে মাটিহারি উপন‍্যাসটা প্রকাশিত হবার গুগি তার সেই প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘সাদা পোশাকের পুলিশ ক্লাসরুমে বসে শুনতো শিক্ষকরা কী পড়াচ্ছেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট (অর্থাৎ মাটিহারি উপন‍্যাসের খবর) এলো প্রেসিডেন্টের কাছে। মাটিহারি নামে একজন লোক আছে, যিনি দেশের মধ‍্যে যা ঘটছে, তা কতটা ঠিক হচ্ছে, কতটা ন‍্যায় হচ্ছে এইসব নিয়ে প্রশ্ন করছে। প্রেসিডেন্ট তাকে ( অর্থাৎ মাটিহারিকে ) গ্রেফতার করতে বললেন। পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন জানতে পারল, মাটিহারি নামে বাস্তবে কোনো লোক নেই, মাটিহারি আসলে এই নামেরই উপন‍্যাসের একটা চরিত্রের নাম, তখন ওই উপন‍্যাসকেই গ্রেফতার করতে বলা হলো। একটা বইয়ের ক সাহস, প্রশ্ন করবে!

বইয়ের দোকান থেকে, প্রকাশকের অফিস থেকে সব বই সরিয়ে ফেলা হলো। ‘প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই’ আপাতত বাংলা একাডেমির মেলা থেকে সরিয়ে নেয়া হলেও, বইয়ের দোকান থেকে সরানো হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে দুটি উপন‍্যাসের মধ‍্যে তফাৎ এই যে মাটিহারি পড়ার পর সেই বই সরানো হয়েছিল, অন‍্যদিকে ববির বই না পড়ে শুধু শিরোনাম দেখেই ( প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি নাই, কী বেইজ্জতি শিরোনাম ) মেলা থেকে সরিয়ে নেয়া হলো। এতসব সরাসরির তাণ্ডবের মধ‍্যেও, গুগি ওয়া থিয়ঙ্গোর অনেক লেখা, উপন‍্যাস, গল্প ইত্যাদি পৃথিবীর বহু ভাষায় অনুদিত হয়ে চলেছে। এবং বর্তমান নেটের দুনিয়ায় ই-বুক নামের সর্বগ্রাসী প্রচার মাধ‍্যমের প্রচারে বইয়ের প্রসার যেভাবে ঘটে চলেছে, এতে করে কোনো বই নিষিদ্ধ হলে তার প্রতি পাঠকের আগ্রহ আরো বেড়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। আর কে না জানে, নিষিদ্ধ ফলেই আকর্ষণ বেশি?

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Exit mobile version