Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রভোস্টকে কুবি ছাত্রলীগ নেত্রী বললেন- ‘হল আমার, যাকে যেখানে খুশি সিট দেব’

কুবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
০৫ মার্চ ২০২৩

‘এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে। যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দেব। আপনাকে এই হলের দায়িত্ব কে দিয়েছে?’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে।

শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে হল পরিদর্শনে এসে সমস্যা সমাধানে ফাইজার সাথে কথা বলতে গেলে ফাইজা এভাবে ধমক দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, শেখ হাসিনা হলের ২১৪ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের ১২তম আবর্তনের প্রেয়শী সানা অন্য রুমে শিফট হওয়ার জন্য হল প্রভোস্ট বরাবর আবেদন করলে তাকে ২১৬ নম্বর রুমের একটি সিটে এলটমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু রুম শিফট করতে গিয়ে প্রেয়শী তার নতুন সিটে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১১তম আবর্তনের রায়হানা আনজুম মিম নামে এক শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে দেখেন। ঘটনা সমাধানের জন্য হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি এসে ১১তম আবর্তনের শিক্ষার্থীকে এখানে অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি হল সভানেত্রী কাজী ফাইজার নাম বলেন। সেই সূত্র ধরে লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রভোস্টকে এভাবে ধমক দেন।

এ সময় হলে অবস্থারত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ফাইজার এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। সে একজন শিক্ষক সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারে, তাহলে ভাবুন আমাদের সাথে কি ধরনের আচরণ করে থাকে? প্রতিদিন সকালে তার চিল্লাচিল্লিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। হলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থী তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ওই হলের হাউজ টিউটর মো. আল আমিন বলেন, ‘হল প্রভোস্টের সাথে ফাইজার আচরণ শিক্ষার্থী সুলভ নয়।’

এ ব্যাপারে কাজী ফাইজা মেহজাবিন বলেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ স্যারকে এই ধরনের কোন কথা বলিনি। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম- ‘এই হল তো আমারও।’

হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান বলেন, ‘হলে কোন শিক্ষার্থী উঠবে আর কোন শিক্ষার্থী উঠবে না, এই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী তো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হল সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি, তা শুধুমাত্র সম্ভব হচ্ছে না ফাইজার জন্য।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের হল প্রশাসন সিট দিয়েছে। কিন্তু ফাইজার কথা হচ্ছে সেই সিট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে নাকি ছাত্রলীগ করতে হবে! যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না, তাদের সিট নিয়ে সে বরাবর ঝামেলা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি চার থেকে পাঁচ দিনের জন্য আমার বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়ে বলে হলে না এলে নাকি আমার সিট বাতিল করে দেবে। আমার সিট বাতিল করার সে কে? সেও শিক্ষার্থী, আমিও শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে হল প্রশাসনের সাথে কথা বলে আমি আমার সিট বহাল রেখেছি।

এ ব্যাপারে কাজী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, আমি এরকম কিছুই করিনি। হলের সিটে এলটমেন্ট তো আমি দেই না। হল প্রশাসন দেয়। আমাদের হলে অবৈধ কিছু হয় না।

হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা হল উদ্বোধনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও প্রথম আসন বরাদ্দের লিস্টে নাম আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু কাজী ফাইজা মেহজাবিন তার ১,২৫০ টাকা হল প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেননি। বিষয়টি হল প্রশাসনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সবাই দিলেও সে হল প্রশাসনকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। আমি বেশ কয়েকবার বলেছি, কিন্তু সে নানা অজুহাত দেখায়। নিয়ম অনুযায়ী তার সিট বাতিল হওয়ার কথা। আমি তার সাথে এই ব্যাপারে সামনে কথা বলব। হল প্রশাসনকে টাকা বুঝিয়ে না দিলে আমি তার সিট বাতিল করার প্রক্রিয়ার দিকে আগাব।

এ ব্যাপারে ফাইজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার টাকা কিছু বাকি ছিল। সেটা আমি দিয়ে দিয়েছি। স্যার সম্ভবত এখনো বিষয়টি পাননি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এখানে পরস্পরমুখী বক্তব্য আছে। প্রভোস্ট স্যারও নাকি ছাত্রলীগ সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে। এখানে দুজনের দুই রকমের বক্তব্য শুনছি। আমরা তদন্ত করে দেখব এবং যদি ফাইজা এমন কিছু বলে থাকে, তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। হল ছাত্রলীগের না, হল প্রশাসন চালাবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ঢাকা টাইমসকে বলেন, হল চালাবে প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা এখানে আসবে কেন? আমি বিষয়টা অবগত হয়েছি। বিষয়টা আলোচনা করে দেখব।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা হল ছাড়াও অন্য শিক্ষার্থীদের সাথেও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে। বাসে থাপ্পড় মারার ঘটনাও রয়েছে এর মধ্যে। গত বছরের নভেম্বরের ৯ তারিখ বাসে সিট রাখাকে কেন্দ্র করে এক ছেলে শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেই শিক্ষার্থীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ছাড় পান সেই ঘটনায়।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/এলএ)

Exit mobile version