Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রভাবশালীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুললেই জানাতে হবে

প্রভাবশালীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুললেই জানাতে হবে

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে যে কোনো পরিমাণ টাকা তুললেই জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপরাধমূলক কাজ সংঘটন ঠেকাতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব ব্যাংকের প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তারা নগদ টাকা উত্তোলন তদারকি করছেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তারা লেনদেনের ক্ষেত্রে নানা নিয়ন্ত্রণ এনেছেন। এর অন্যতম কারণ, এটিএম বুথে টাকা ঢোকাতে রাজি হচ্ছে না সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো। আবার এক শাখা থেকে আরেক শাখায় টাকা নিতে চাচ্ছে না। এ অবস্থায় গ্রাহকরা সব এটিএম বুথে টাকা পাচ্ছেন না। আবার যেসব বুথে টাকা আছে, সেখানে লেনদেন সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসাবাড়ির নিরাপত্তা বিবেচনায় অনেকেই শাখায় টাকা জমা দিচ্ছেন। অনেকেই বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার জন্য টেলিফোন করে জানতে চাচ্ছেন। অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তারা আশা করছেন।

প্রভাবশালীদের টাকা উত্তোলন ঠেকানোর নির্দেশ

জানা গেছে, বিগত সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এমন ব্যক্তিদের অনেকেই সশরীরে উপস্থিত না হয়ে অন্যদের মাধ্যমে চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে পাঠাচ্ছেন। কেউ কেউ টাকা তুলে ডলার করার চেষ্টা করছেন। লেনদেনের ধরন দেখে যা সন্দেহজনক মনে করছে ব্যাংক। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ফোন করে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে দিকনির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে। এরকম অবস্থায় সন্দেহজনক হলে চেক ফেরত দিতে বলা হয়। এসব বিষয়ে সামগ্রিকভাবে একটি নির্দেশনা দিতেই গতকাল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিএফআইইউ।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের (পলিটিক্যালি এক্সপোসড পারসন) বড় অঙ্কের লেনদেন বিষয়ে আগে থেকেই কিছু নির্দেশনা রয়েছে। তবে বড় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, আমলা, ব্যাংকের পরিচালক ইত্যাদি পর্যায়ের ব্যক্তিদের লেনদেনের তথ্য পাঠানোর প্রবণতা কম ছিল। গতকালের বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আপাতত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের যে কোনো ধরনের লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউকে জানাতে হবে।

চাওয়া হয়েছে বেনামি ঋণের তথ্য

বৈঠকে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান বেনামি ঋণ নিয়েছে। এই মুহূর্তে বেনামি কোনো ঋণের টাকা ছাড় করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল ও বুধবার ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের ৮৪৮ কোটি টাকার বেনামি ঋণ বের করে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি আলোচনায় আসে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো ঋণের অর্থ যেন ছাড় না করা হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে প্রতিটি ব্যাংকের বেনামি ঋণের আসল সুবিধাভোগীর তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, এ সময়ে নগদ টাকা নিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে খাটাতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে একাধিক শাখা থেকে টাকা তুললে তা বোঝার উপায় থাকবে না। এ কারণে টাকা উত্তোলনের সঙ্গে সন্দেহজনক প্রবণতার বিষয়ে  ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার ১ লাখ টাকার বেশি তোলা যায়নি

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল বৃহস্পতিবার একবারে কাউকে ১ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন না করতে দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার গভীর রাতে সব ব্যাংকের এমডিকে এসএমএস দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এর পর ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সব শাখায় তা জানিয়ে দেওয়া হয়। মূলত নিরাপত্তা এবং কেউ যেন অপরাধমূলক কাজের জন্য টাকা উত্তোলন না করে, সে জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। এ সময়ে কেউ একবারে বেশি টাকা তুললে নিরাপত্তার ইস্যু রয়েছে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যাংকগুলো এক শাখা থেকে আরেক শাখায় টাকা নিতে সমস্যা হচ্ছে। এটিএম বুথেও টাকা রাখতে পারছে না। সব মিলিয়ে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংক যেহেতু ঠিক মতো টাকা আদান-প্রদান করতে পারছে না, যে কারণে অনেক এটিএম বুথে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব বুথে টাকা মিলছে সেখানেও টাকা উত্তোলনের সীমা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী রোববার থেকে সমস্যা থাকবে না বলে তিনি আশা করেন।

samakal

Exit mobile version