Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৫.২ শতাংশ : বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস


চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫.২ শতাংশ হবে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কঠোর আর্থিক অবস্থা, বিঘ্নিত আমদানি নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। তবে আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশে উঠবে বলে আশা করছে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক।

সরকার চলতি বছর বাজেটে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। শুল্ক ও অশুল্ক উভয় বাধাই কমানো, রাজস্ব খাতে সংস্কার, বাণিজ্য সংস্কার, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

আগারগাঁওস্থ সংস্থার ঢাকা অফিসে গতকাল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট এপ্রিল ২০২৩ শিরোনামে ‘বাণিজ্য সংস্কার : একটি জরুরি এজেন্ডা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। ব্রিফিংএ বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। আর বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে ত্বরান্বিত হবে বলে আশাবাদ জানায় সংস্থাটি। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। জুনে পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশের। অর্থাৎ সেই তুলনায় বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস, বাহ্যিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসে তাহলে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির দ্বারা সমর্থিত কোভিড-১৯ মহামারী থেকে বাংলাদেশ দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু অর্থনীতি এখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ, জ্বালানি ঘাটতি, অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতি এবং রাজস্ব ঘাটতিসহ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আর বাণিজ্য সংস্কার এবং রফতানি বহুমুখীকরণসহ কাঠামোগত সংস্কারের বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করা বাংলাদেশকে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে নেভিগেট করতে এবং প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

সংস্থাটি বলছে, পণ্যের উচ্চমূল্য মূল্যস্ফীতির চাপে অবদান রেখেছে। অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ঘাটতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৭.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা আগের অর্থবছর ৫.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়েছে। এটা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে। একটি বহুমুখী বিনিময় হার পদ্ধতি পেমেন্টের চাপের ভারসাম্যে অবদান রেখেছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহকে নিরুৎসাহিত করেছে। একক বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হারের দিকে অগ্রসর হওয়া বাহ্যিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংরাদেশের ব্যাংকগুলো কঠোর তারল্য এবং ক্রমবর্ধমান অ-পারফর্মিং ঋণের সাথে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। দেশীয় ব্যাংকগুলো থেকে উচ্চতর অর্থায়নের ফলে আর্থিক ঘাটতি বিস্তৃত হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৩ যৌথ বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ঋণ টেকসই বিশ্লেষণ মূল্যায়ন করেছে যে, বাংলাদেশ ঋণ সংকটের কম ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য বাণিজ্য প্রতিযোগিতার উন্নতি, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কোভিড-১৯ মহামারী একটি একক খাতের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকির ওপর জোর দিয়েছে। রফতানিতে বৈচিত্র আনয়ন এবং প্রতিযোগিতার উন্নতি বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনে সহায়তা করবে। এর জন্য, শুল্ক ও অশুল্ক উভয় বাধাই কমানো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি আঞ্চলিক একীকরণকে শক্তিশালী করতে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সাথে। তবে বেশিরভাগ দেশে সীমিত আর্থিক স্থান এবং রিজার্ভের ক্ষয় হওয়ার কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক ঝুঁকি রয়েছে।

আবদৌলায়ে সেক বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে ব্যাহত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

Exit mobile version