Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রত্যাশা অনেক অগ্রগতি কম

প্রত্যাশা অনেক অগ্রগতি কম

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, তা বাস্তবে রূপ দিতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দেশে রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থানের দুই মাস পূর্ণ হলেও অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে।

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার দাবি জোরালো হলেও এ ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি হয়নি। আহতরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত সহায়তা। শুরু হয়নি গণহত্যার বিচার এবং হতাহতদের পুনর্বাসন।
যৌথ বাহিনীর আটকের পর কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুমের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের গুমের ঘটনার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোপন বন্দিশালার প্রমাণ পেয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরলেও, আয়নাঘরখ্যাত গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল হাসিনা সরকার।

ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালান কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তবে প্রত্যাশা পূরণে সরকার অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং নানা পেশার মানুষ। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, স্থিতিশীল পরিবেশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করার ক্ষেত্র আরও জোরদার করার কথা বলেছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার শোষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে। দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের আওতায় আনায় অন্তর্বর্তী সরকার তেমন কিছু করতে পারেনি। গণহত্যাকারী এবং তাদের সমর্থকদের নতুন বাংলাদেশে কী অবস্থান হবে, তা রাজনৈতিক অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত কিনা– সে ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান থাকা উচিত বলে মনে করেন আবু বাকের। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক অংশীজনের স্পষ্ট অবস্থান থাকতে হবে, ফ্যাসিবাদী দোসরদের রাজনীতির কী হবে। জার্মানিতে গণহত্যাকারী নাৎসি বাহিনীকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দল, নির্বাচন, ক্ষমতার পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এই সমন্বয়ক। আবু বাকের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা উচিত। নতুন বাংলাদেশে আমরা আগের মতো রাজনীতি চাই না। আমাদের জায়গা থেকে সব অংশীজনকে আহ্বান করছি।
আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কথা বলার বা মতপ্রকাশের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বৈষম্য দূর করে ন্যায্যতা তৈরির জায়গাটি তৈরি হয়েছে। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন, সেই শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনি। আহতের অনেকে খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের কাছে আমরা এখনও যেতে পারিনি।

প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়ে গেছে জানিয়ে কাদের বলেন, হাসিনার পতন হলেও হাসিনার মেকানিজম থেকে গেছে, সেটা এখনও চলছে। এটা ঠিক করা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও হয়ে ওঠেনি। আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়নি। এটা প্রথম অগ্রাধিকার থাকার কথা ছিল। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের নিপীড়ন এবং জুলাই বিপ্লবে সন্ত্রাসী হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। যে কারণে মব লিঞ্চিংয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আইনের দুর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠন কাজ করছে, উগ্রগোষ্ঠী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত সরকারের অবস্থান জানানো উচিত।
সাখাওয়াত হোসেন হৃদয় নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, গত দুই মাসে চাকরির ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চাকরি সহজীকরণের প্রতিশ্রুতি স্থবির। ৪৬তম বিসিএসের পর সমন্বিত ব্যাংকের পরীক্ষা ছাড়া গত পাঁচ মাসে আর কোনো চাকরির পরীক্ষা হয়নি। চাকরির আবেদন ফিও কমেনি। ফলে আমি কোনো পরিবর্তন দেখছি না।
সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমলেও নিত্যপণ্যের দাম এখনও আকাশছোঁয়া। রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে রিকশাওয়ালা সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম তো কমতেছে না। যে খরচ, সে তুলনায় ইনকাম তেমন হয় না। দেখি সামনে কী হয়’।

আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এত বড় বন্যার পরও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। কিছু কাজ হচ্ছে, তবে জিনিসপত্রের দাম কমছে না। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষেত্রে সরকারকে কাজ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ নির্মূলে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

samakal

Exit mobile version