Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রণোদনার পরও চলছে লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাই

 

পোশাক কারখাার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়ার পরও কারখানা লে-অফ এবং ছাঁটাই চলছে। রোববার পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার কারখানার মধ্যে ৭৬১টি কারখানা মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে, জানিয়েছে বিজিএমইএ।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনের দেয়া তথ্য মতে এখন পর্যন্ত ৭০ ভাগেরও বেশি কারখানা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেয়নি। আবার অনেক কারখানা কয়েকমাস ধরে বেতন না দিয়ে করোনার অজুহাত দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। চার-পাঁচটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধের খবর পাওয়া গেছে। তবে ১৬ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের যে সময়সীমা আছে তা পার হলে বোঝা যাবে কত কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাই

সারাদেশে একশর মতো কারখানা লে-অফ করা হয়েছে বলে জানান আমিরুল হক। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারখানা বন্ধ না করে শ্রমিকদের একটি অংশকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আশুলিয়া এলাকায় তিন হাজার, সাভারে আড়াই থেকে তিন হাজার, নারায়ণগঞ্জে দেড় হাজার, গাজীপুরের কোনাবাড়ি-হোতাপাড়া এলাকায় এক হাজার এবং ভালুকা এলাকায় এক হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার জানান,‘আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে ১৫ হাজারের মতো পোশাক শ্রমিক এরইমধ্যে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন।’

রোববারও উত্তরার ভার্সেটাইল গার্মেন্টস ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় এ্যাবলুম ডিজাইন লিঃ গার্মেন্টস বেতন না দিয়েই লে-অফ করা হয় বলে জানান তিনি।

ভার্সেটাইল গার্মেন্টস-এর অপারেটর হানিফ শেখ জানান,‘আজ (রোববার) সকালে লে-অফের নোটিশ গেইটে টাঙিয়ে দেয়া হয়। আমাদের মার্চ মাসের বেতন না দিয়েই এই নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আমরা এখানে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করি৷ এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।’

উত্তরার চৈতি এবং কাশিমপুরে ড্যানিশ গার্মেন্টসসহ ২০টি গার্মেন্টস-এ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলে জলি তালুকদার জানান। ড্যানিশ গার্মেন্টস-এর শ্রমিক এমরার হোসেন বলেন,‘আমাদের ৩০-৩৫ জনকে বেতন না দিয়েই ছাঁটাই করা হয়। একটি সাদা কাগজে সই নিয়ে বলা হয় এখন তোমাদের কোনো কাজ নেই। প্রয়োজন হলে ডাকব।’

বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ

রোববার ঢাকার মিরপুর, সাভার এবং গাজীপুরে শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সাভারের হেমায়েতপুরে রাকিব অ্যাপারেলস-এর শ্রমিকরা তিনমাস ধরে বেতন পান না। আগামীকাল (১৩ এপ্রিল) তাদের বকেয়াসহ মার্চ মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আজ (১২ এপ্রিল) সকালে কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয় গেটে।

ওই কারাখানার শ্রমিক আমিনুল ইসলাম জানান,‘কারখানায় কেউ নেই৷ নোটিশে বলা হয়েছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ১০দিন পর বেতন দেয়া হবে। এখন কবে আমরা বেতন পাব জানি না। আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’

আরেকজন শ্রমিক নাসিমা আক্তার বলেন,‘আমরাতো করোনায় এমনিতেই মারা যাব। তাই করোনায় ভয় পাই না। যা হয় হবে। পেটে ভাত আগে। আমরা এই রাস্তায় থাকবো যতদিন বেতন না পাই।’

বিজিএমইএ যা বলছে

এদিকে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা হলো ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মার্চের বেতন দিয়ে দিতে হবে। আর কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। প্রণোদনার টাকায় এই বেতন ভাতা দিতে হবে আগামী তিন মাস।

এর জবাবে বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বলেন,‘সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা পোশাক শিল্প মালিকদের শ্রমিক ছাঁটাই না করার জন্য বারবার বলছি। আর আশা করছি ১৬ তারিখের মধ্যে অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাবেন। তবে সবাইকে বুঝতে হবে আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কারাখানাগুলো এখন করোনার কারণে বন্ধ।’

লে-অফের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘নিয়ম নীতি মেনে কারাখানা তো লে-অফ করা যায়। কোনো মালিক যদি কারখানা চালাতে না পারে তাহলে তিনি লে অফ করতে পারেন।’

শ্রমিক নেতা আমিরুল হক বলেন,‘আসলে শ্রমিকদের বেতন কম দেয়ার জন্য এই লে-অফকে ব্যবহার করছেন মালিকরা। আর তারা পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ না করেই লে-অফ করছে।’

শ্রম আইনে যা আছে

শ্রম আইন অনুয়ায়ী শর্ত সাপেক্ষে কারখানা ৪৫ দিনের জন্য লে-অফ করা যায়। লে-অফের সময় শ্রমিকরা মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন। আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বহাল থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাস বলেন,‘শ্রম আইনের ১২ ধারায় লে-অফের কতগুলো শর্ত আছে। তারমধ্যে দুটি শর্ত হলো: মহামারি এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া। সরকার কিন্তু করোনাকে বাংলাদেশে এখনো মাহামারি ঘোষণা করেনি। আর সরকারতো প্রণোদনার মাধ্যমে শ্রমিকদের তিনমাসের বেতন দিয়েছে। আসলে মালিকরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। এটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। আর বেতন ভাতা না দিয়ে লে-অফ করা বেআইনি।’

বেতন না দেয়া এবং শ্রমিক ছাঁটাইকে শুধু বেআইনি নয়, অমানবিক বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন,‘কারখানা ভূমিকম্প বা আগুন লেগে ধংস হয়ে গেলে বন্ধ করা যায়। সেরকমতো কিছু হয়নি। মালিকরা এতদিন ব্যবসা করেছেন তারা কয়েক মাসতো চালিয়ে যেতে পারেন। প্রণোদনার টাকা পাইপলাইনে আছে। অতিরিক্ত শ্রমিক হলে নিয়ম মেনে তাদের পাওনা ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাঁটাই করা যায়। কিন্তু সেরকমতো কিছু হয়নি। আর শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং বেনিফিট দেয়া হচ্ছে না। এটাতো অন্যায়।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে

Exit mobile version