Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রচার ও কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা স্বতন্ত্র ও ছোট দলের প্রার্থীদের

ব্যালট বাক্স

নির্বাচনী প্রচার চালাতে এবং ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না—এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ঢাকার সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে মতবিনিময়ে স্বতন্ত্র ও ছোট দলের প্রার্থীরা এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। এ সময় ইসির পক্ষ থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে ঢাকা ও আশপাশের জেলার পুলিশের কর্মকর্তা ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ইসি আরেকটি মতবিনিময় সভা করে। সেখানে একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাঁদের পক্ষে কাজ করার জন্য পুলিশকে চাপ দিচ্ছেন।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উভয় মতবিনিময় সভার আয়োজক ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সভাপতিত্ব করেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাবিরুল ইসলাম।

প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়

এই মতবিনিময় ছিল ঢাকা মহানগরী ও জেলা মিলিয়ে মোট ২০টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে। এসব আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ১৫৬ জন। তবে তাঁদের সবাই উপস্থিত ছিলেন না। কেউ কেউ প্রতিনিধি পাঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় সিইসির সূচনা বক্তব্যের পর প্রথমে বক্তব্য দেন ঢাকা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালমা ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি চান নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়, কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি যেন না হয়। ওই আসনে এনপিপির প্রার্থী আবদুল হাকিম বলেন, তাঁর আসনে প্রার্থীদের দুজন (একজন সংরক্ষিত আসনের) বর্তমান সংসদ সদস্য। তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। জবাবে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসির কাছে সব প্রার্থী সমান। সবাই নির্বাচনের মাঠে সমান সুযোগ পাবেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, একজন প্রার্থী নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়টি তুলে দেওয়ার কথা বলেন। তাঁর যুক্তি, পোলিং এজেন্টরা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করেন। ইসি এই ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রে সাহসী পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করার পরামর্শ দেয়। বৈঠকে প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কে বা কারা তাঁদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এত বেশি পোস্টার লাগাচ্ছেন যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অন্য প্রার্থীরা পোস্টার লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন না।

মিরপুর এলাকার একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়।

যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এটাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থীর দাবি, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের এজেন্ট দেওয়ারই ক্ষমতা নেই। তাঁর এই বক্তব্যে অন্য প্রার্থীরা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় কিছুটা হট্টগোলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এ ছাড়া প্রার্থীদের কেউ কেউ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি করেন। তবে ইসি বলেছে, এটি সম্ভব হবে না।

মতবিনিময় সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র ও ছোট ছোট দলের প্রার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তাঁরা ঠিকমতো প্রচার করতে পারবেন কি না। ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না। তাঁদের এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারবেন কি না। এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন এসেছে।

মো. আলমগীর বলেন, প্রশাসন ও ইসির পক্ষ থেকে প্রার্থীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারবেন। তাঁদের এজেন্টদের কোনো সমস্যা হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জানাবেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সমাধান করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রার্থীর পক্ষে থাকতে ওসিকে চাপ

এর আগে সকালে আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট মতবিনিময় সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মতবিনিময়কালে মানিকগঞ্জে জেলার একজন ওসি বলেন, তাঁর এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোটে তাঁর পক্ষ হয়ে কাজ করতে পুলিশকে চাপ দিচ্ছেন।

জবাবে সিইসি বলেন, কারও পক্ষে কাজ করা যাবে না। এখানে কে আওয়ামী লীগের সেটা দেখার বিষয় নয়। সব প্রার্থী সমান। ওই ওসিকে সাহসিকতা নিয়ে নির্ভয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন সিইসি।

নরসিংদীর একজন ওসি বলেন, আওয়ামী লীগের এক প্রার্থী নির্বাচনে এখন থেকেই তাঁর সঙ্গে থাকার ও নির্বাচনে তাঁর হয়ে কাজ করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় সিইসি বলেন, ওই প্রার্থীর কোনো নির্দেশ আমলে নেওয়া যাবে না। তাঁকে প্রশ্রয় না দিলে ওই প্রার্থী এমনিতেই চুপ হয়ে যাবেন। তাঁকে ভয় পাওয়ারও কোনো কারণ নেই।

মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের একাধিক ওসি দুর্গম এলাকার কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভোটের আগের রাতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। তাঁদের ভাষ্য, ভোটের দিন সকালে ঘন কুয়াশা থাকে। এর মধ্যে ব্যালট বাক্স বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় নদীপথে, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে হয়। এ ধরনের কেন্দ্রের কাছাকাছি উপকেন্দ্রে আগের রাতে পুলিশের নিরাপত্তায় ব্যালট বাক্স রাখা যেতে পারে।

তবে ইসি বলেছে, ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে যাবে। দুর্গম এলাকা হলে আগে ব্যালট নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে যুক্তি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে।

এ ছাড়া ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে এমন নাশকতা আরও হতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আশঙ্কার কথা জানান।

দুপুরে এই মতবিনিময় সভা শেষ হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিকল্পনা ইসিকে জানিয়েছে।

ইসিও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। কোনো নাশকতামূলক ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং ঘটনা ঘটানোর আগেই যাতে না ব্যবস্থা নিতে পারে, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া সবাইকে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে।

প্রথম আলো

Exit mobile version