Site icon The Bangladesh Chronicle

পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ কমেছে ১০%

পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ কমেছে ১০%

রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা শ্রম অসন্তোষ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট এবং কখনও কখনও বন্দরের জট তো রয়েছে। এসব ঘটনায় সরবরাহ চেইনে বিপর্যয় দেখা দেয়। উৎপাদন ব্যাহত হয়। সময়মতো পণ্য বুঝে পেতে উদ্বেগ তৈরি হয় ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। রপ্তানি আদেশের সময় ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দর আলোচনায় দেশের পোশাক খাতের এসব দুর্বলতা উঠে আসে টেবিলে। ক্ষুণ্ন হয় দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ।

সর্বশেষ চলমান অস্থিরতা পোশাক খাতকে আরেক দফা বিপাকে ফেলেছে। অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশের বিকল্প দেশে। উদ্যোক্তাদের অনুমান, চলমান অস্থিতিশীলতায়  অন্তত ১০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব রপ্তানি আদেশের বড় অংশই যাচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তানে। গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে মিলিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্রেতা প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন না। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রেতারা দেরিতে মূল্য পরিশোধ এবং চুক্তিবদ্ধ দরের চেয়ে দর কম দিতে চান। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ৩০০ গুণ ব্যয়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চাপ দেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। উৎপাদন হওয়ার পর রপ্তানি আদেশ বাতিল হলে ‘স্টকলট’ হিসেবে স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। অতীতে এ রকম অনেক ঘটনায় কারখানা বসে যাওয়ার ঘটনা আছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রধান বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। বর্তমানে দেশটির ক্রেতা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। মার্কিনিদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। পরদিনই মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে চতুর্থ ধাপের ভ্রমণ সতর্কতা

জারি করা হয়। এতে বেসামরিক অস্থিরতা, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে মার্কিন ক্রেতারা এখন ঢাকায় আসছেন না। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিক সতর্কতা জারি করেনি। তবে নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় জোটের ২৭ দেশের ক্রেতারাও আসছেন না।

এ রকম বাস্তবতায় তৈরি পোশাক খাতে গত প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে অচলাবস্থা চলছে । আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সংকটই প্রকট। উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদন হয় এ রকম বড় আকারের ৪০০ কারখানা রয়েছে এ অঞ্চলে। পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের তুলনায় পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে– এ রকম কিছু আনকোরা দাবি বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর এবং কর্মবিরতির ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রতিদিনই। ফলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা।

আকাশপথে পাঠাতে হচ্ছে পণ্য নারায়ণগঞ্জ বিসিকে অবস্থিত এম বি নিট কারখানায়  ইতালি এবং স্পেনের দুই  ব্র্যান্ডের  রপ্তানি আদেশের টি-শার্ট এবং জ্যাকেট ক্রেতা প্রতিনিধিদের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হওয়ায় শিডিউল মতো পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে দু’দিন আগে এসব পণ্য আকাশপথে পাঠাতে হয়েছে। রপ্তানি আদেশের চুক্তি অনুযায়ী, নির্ধারিত তারিখে পণ্য পাঠানোর শর্ত থাকে ক্রেতাদের। এম বি নিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তৈরি পোশাকের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, ১ লাখ ৫১ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য পৌঁছাতে ৭৫ হাজার ডলার প্রায় ৮৪ লাখ টাকা বিমান ভাড়া গুনতে হয়েছে তাঁকে। অথচ সময়মতো উৎপাদন করে জাহাজীকরণের জন্য ক্রেতা প্রতিনিধিদের হাতে পণ্য বুঝিয়ে দিতে পারলে এ বাবদ খরচ হতো না।  আরও একটি চালানের অর্ধেক পণ্য আকাশপথে বাকি অর্ধেক জাহাজীকরণের জন্য ক্রেতা প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছানোর কথা জানান তিনি।

রপ্তানি আদেশ কমেছে অন্তত ১০ শতাংশ 

ডেনিম এক্সপার্টের পরিচালক এবং তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, কোনো না কোনো ঘটনায় বারবার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলে খুব স্বাভাবিক কারণেই ক্রেতারা আস্থা হারাবেন। তারা উদ্বিগ্ন। প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তারা। শিডিউল অনুযায়ী পণ্য হাতে না পেলে তারাও বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য। এ কারণে গত কয়েক দিনে অন্তত ১০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশ কম পেয়েছে বলে অনুমান করছেন তিনি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রকৃত পরিসংখ্যান তারা জানতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানের শ্রমঅসন্তোষ খুব পরিকল্পিত। ক্রেতারা যাতে আস্থা হারান– এ রকম একটা টার্গেট থেকেই কিছু শ্রমিক এবং ভাড়া করা বহিরাগতদের দিয়ে শিল্পকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় কিছু রপ্তানি আদেশ প্রতিবেশী দেশে চলে গেছে।

SAMAKAL

Exit mobile version