মাস তিনেকের মধ্যে পুরোদমে চালু হচ্ছে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড। একই সাথে রাস্তাটিকে টোলের আওতায় আনারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে টোল আদায়ের কার্যক্রম শুরু করতে আরো বছর খানেক লাগতে পারে। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করার প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। দফায় দফায় সময় এবং ব্যয় বাড়ানোসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে অবশেষে চালু হওয়া রাস্তাটি শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে গতিশীলতাসহ আউটার রিং রোড গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১০ সালের দিকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রথম বাইপাস হিসেবেও রাস্তাটিকে গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। ২০১৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ তো দূরের কথা ঠিকঠাকভাবে শুরু করাও সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল, এরপরের বারে ২০১৮ সাল, তৃতীয় দফায় ২০২০ সাল ও চতুর্থ দফায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। দফায় দফায় সংশোধন এবং সময় বাড়ানোর ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকায়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথম বাধা আসে এশিয়ান উইম্যান ইউনির্ভাসিটি থেকে। কথা ছিল রাস্তাটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে এপার–ওপার করবে। রাস্তার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে বাধা দেয় এবং রাস্তাটি তাদের ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে আপত্তি তোলে। তারা প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে সরিয়ে সিলেট নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে। অবশেষে সিডিএ প্রকল্পটি সংশোধন করে, ডিজাইন পরিবর্তন করে। নতুন করে প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ’। এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এক কিলোমিটারেরও বেশি অংশের পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এই রাস্তা নির্মাণে পাহাড় কাটতে গিয়ে সিডিএ নতুন করে বিপদে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা মোকদ্দমাসহ নানা জটিলতায় জড়িয়ে যায়।
এসব মোকাবেলা করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করে এলেও ফৌজদারহাট অংশে রেল লাইনের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আবারো প্রকল্পের কাজ ঝুলে যায়। ব্রিজের উচ্চতা নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবারো শুরু হয় দেন দরবার। অনেক চেষ্টা তদবির করে এবং রেলওয়ের প্রয়োজনে ব্রিজ ভেঙে ফেলা হবে মর্মে অঙ্গীকার দেয়ার পর প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে বেশ জোরেশোরে ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। আগামী মাস তিনেকের মধ্যে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হলে রাস্তাটি পুরোদমে চালু করা হবে। কাজ শেষ না হলেও ইতোমধ্যে রাস্তাটি অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু করে দেয়া হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হিসেবে ইতোমধ্যে সড়কটি বিবেচিত হচ্ছে।
২০১৯ সাল থেকে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও সিডিএ বলেছে, চলতি বছরের মধ্যেই রাস্তাটি পুরোদমে চালু করে দেয়া হবে। এই রাস্তা থেকে টোল আদায়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সিডিএ। তবে টোল আদায়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ করতে আরো বছরখানেক লাগতে পারে বলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাস্তাটি থেকে আমরা খুবই সহনীয়ভাবে টোল আদায় করবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পটিতে বেশ কিছু বাড়তি কাজ হয়েছে। এতে বেশ অর্থ খরচ হয়েছে। এসব অর্থ সিডিএ নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করছে। এই বাড়তি খরচ মেটাতে সিডিএকে টোল আদায়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই সিডিএ এই রাস্তায় চলাচলকারী সবধরনের গাড়িকে টোলের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরমধ্যে মোটরসাইকেল থেকে ১০ টাকা। তিন চাকার গাড়ি থেকে ১৫ টাকা। প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাস থেকে ৫০ টাকা, পিকআপ ও মিনিবাস থেকে ৮০ টাকা, বড় বাস থেকে ১০০ টাকা, চার চাকার ট্রাক থেকে ১২০ টাকা। ছয় চাকার ট্রাক থেকে ১৫০ টাকা। ট্রেইলর বা কাভার্ড ভ্যানের টোল ধার্য করা হয়েছে ২০০ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত টোল নেয়া হবে সড়কটিতে। টোল আদায়ের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।