বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিল বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ কোম্পানিভিত্তিক বকেয়ার হিসাব চূড়ান্ত করেছে পিডিবি। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিডিবির বকেয়া পড়েছে ৩৬ হাজার ৭৫০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১৩টি গ্রুপ ও কোম্পানির কাছেই বকেয়া রয়েছে ২৮ হাজার ৭৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ভারতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কাছে। এর পরিমাণ চার হাজার ১১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আদানির। কোম্পানিটির ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া দুই হাজার ৮১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অন্যান্য চার কোম্পানির পাওনা এক হাজার ২৯৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তবে ভারতের অপর দুটি কোম্পানির কাছে পিডিবির সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানির কোনো বিল বকেয়া নেই।
এদিকে দেশীয় সামিট গ্রুপের আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন হাজার ৬১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ-চীন বিদ্যুৎ কোম্পানির পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পরের অবস্থানে (চতুর্থ) থাকা দেশীয় ইউনাইটেড গ্রুপের সাত বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওনার পরিমাণ দুই হাজার ৫৫৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
পাওনার দিক থেকে পরের তিনটি অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন কোম্পানি। এর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে থাকা নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সাত কেন্দ্রের বকেয়া দুই হাজার ২৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) তিন কেন্দ্রের পাওনা দুই হাজার ২৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (সপ্তম স্থান) ছয় কেন্দ্রের পাওনা দুই হাজার ১৯৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
বকেয়ার দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে সিডিসি মালয়েশিয়া। বিদেশি মালিকানাধীন এ কোম্পানির দুই কেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরের স্থানে থাকা দেশীয় ওরিয়ন গ্রুপের ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ৩৭৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। দশম স্থানে রয়েছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল)। আরইবির বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মালিকানাধীন এ কোম্পানির চার কেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ৩৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
পরের স্থানে থাকা বেসরকারি খাতের ডরিন গ্রুপের সাত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। ১২তম স্থানে থাকা কনফিডেন্স গ্রুপের চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়ার পরিমাণ এক হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর ১৩তম স্থানে থাকা অ্যাক্রন গ্রুপের (বাংলাক্যাট) পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়ার পরিমাণ এক হাজার ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
বাকি গ্রুপ বা কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়ার পরিমাণ হাজার কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ৯৫৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের বারাকা গ্রুপের চার কেন্দ্রের বকেয়া ৭৯০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানার সেম্বকর্প-এনডব্লিউপিজিসির বকেয়া ৭৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ইয়ুথ গ্রুপের তিন কেন্দ্রের বকেয়া ৫৮৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং দেশ গ্রুপের তিন কেন্দ্রের ৫৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এর বাইরের গ্রুপ বা কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়ার পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বি-আর পাওয়ারজেনের বকেয়া ৪৯১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, শ্রীলঙ্কার লঙ্কা গ্রুপের বকেয়া ৪১৯ কোটি ১৩ লাখ, বেসরকারি খাতের এসএস পাওয়ারের ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ, আনলিমা গ্রুপের ৩৪৬ কোটি ৩৭ লাখ, প্যারামাউন্ট গ্রুপের ৩৪২ কোটি ৬০ লাখ, বরিশাল ইলেকট্রিকের ৩৩৬ কোটি ৩০ লাখ, বিদেশি মালিকানাধীন নতুন বিদ্যুৎ কোম্পানির ৩৩১ কোটি ৬২ লাখ এবং ইনডেক্স গ্রুপের ৩১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া পিজিসিবির হুইলিং চার্জ বকেয়া রয়েছে ৩০৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
এদিকে বেসরকারি খাতের সৌরবিদ্যুতের ছয়টি কোম্পানির বকেয়া ২৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ইপিভি গ্রুপের ২৬৪ কোটি ১৮ লাখ, সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের যৌথমালিকানাধীন কেপিসিএলের ২৫৬ কোটি ৯৪ লাখ, হোসাফ গ্রুপের ২৫৫ কোটি ৩০ লাখ, যুক্তরাজ্যের এগ্রিকোর ১৩৩ কোটি ৪৬ লাখ, দেশীয় ম্যাক্স গ্রুপের পাওনা ১২২ কোটি ৮৩ লাখ, সিনহা গ্রুপের ১১৬ কোটি ৭০ লাখ, রিজেন্ট গ্রুপের ৯৬ কোটি ৯৯ লাখ, সিকদার গ্রুপের ৮৪ কোটি ২৭ লাখ, নর্দান পাওয়ারের ৬৬ কোটি ২৪ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রের এপিআর এনার্জির ৭৪ কোটি ৭৭ লাখ এবং দেশীয় জিবিবি পাওয়ারের ৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।