মানবজমিন ডেস্ক
(২ ঘন্টা আগে) ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন
জেন-জি তার দাবি আদায় না করে পিছু হটে না। শেষ পর্যন্ত তা বুঝতে পেরেছে নেপাল সরকার। তারা অবশেষে পিছু হটেছে। প্রত্যাহার করে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ততক্ষণে যে কমপক্ষে ১৯ জন প্রাণ দিলেন, তার কি হবে! টিকে থাকতে পারবে তো সরকার! এসব প্রশ্নের আভাস মিলতে পারে আজ মঙ্গলবার। বিদেশি মিডিয়া থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি মোটেও ভাল নেই। সোমবার জেনারেশন-জেড বা জেন-জি’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয় নেপাল। মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ। অগ্নিসংযোগ। ভাঙচুর। গুলি। এসব ঘটনায় নেপাল যেন ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের একটি নতুন উপাখ্যান হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এতই নাজুক যে সেখানে বাংলাদেশ দলের ফুটবল ম্যাচ। কখন কি হয়ে যায়, কোন মুহূর্তে পটপরিবর্তন হবে কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছিল না। এমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে নেপালবাসী রাতের অন্ধকারে ঘুমাতে গেছেন।
ওদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতায় পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মধ্যরাতে জরুরি সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। যোগাযোগ, তথ্য ও সম্প্রচার বিষযক মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং ঘোষণা দেন, জেনারেশন-জেড-এর দাবি মেনে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর আগে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার পূর্বের সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত নয়। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা যেহেতু এই ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে, তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী গুরুং প্রতিবাদকারীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এদিকে মন্ত্রিসভা সহিংসতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওদিকে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি জানান, নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি এক্স নেপালের সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করেছে। ওলির ভাষায়, আমরা দেড় বছর ধরে বলে আসছি, তাদের নিবন্ধন করতে বলেছি, আইন মানতে বলেছি। কিন্তু তারা বলেছে, নেপালে তারা একেবারেই নিবন্ধিত হবে না। এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। গত সপ্তাহে নেপাল সরকার বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা নতুন নিবন্ধন আইন মানেনি। সরকারের দাবি, ভুয়া আইডি খুলে ঘৃণামুলক বক্তব্য, ভুয়া খবর, প্রতারণা ও অপরাধ ছড়ানো হচ্ছিল এসব প্ল্যাটফর্মে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট, পিন্টারেস্ট ও এক্স সহ চীনের টেনসেন্ট এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়নি। সংসদ ভবনের সামনে প্রবল বিক্ষোভ হলে সরকার কারফিউ জারি করে। হাজারো মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীদের হাতে শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল, ‘দুর্নীতি বন্ধ কর, সোশ্যাল মিডিয়া নয়’। ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দাও’। ‘যুবসমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে’। সাধারণ নেপালি জনগণ মনে করেন দেশে দুর্নীতি ব্যাপক, আর ওলি সরকারের ব্যর্থতার কারণে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মন্ত্রী ও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের জড়িত একাধিক দুর্নীতির মামলা প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার পর টিকটকে ভাইরাল হয়েছে ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে সাধারণ নেপালিদের কষ্ট আর রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও বিদেশ ভ্রমণের দৃশ্য। বিক্ষোভকারী ভূমিকা ভারতী এএফপিকে বলেন, বিদেশেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। সরকার ভয় পাচ্ছে, এখানেও যেন সেই রকম না হয়। জাতিসংঘ মৃত্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ঘটনার দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, নেপালে বিক্ষোভকারীদের হত্যাকাণ্ড ও আহত হওয়ায় আমরা বিস্মিত। আমরা অবিলম্বে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাই।