Site icon The Bangladesh Chronicle

পাঁচ বছরে আমানতের টাকা দ্বিগুণ হচ্ছে, ঋণের সুদ ছাড়িয়েছে ১৫%

টাকা

ব্যাংকঋণের সুদহার বাজার নির্ধারণ করবে-বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ঘোষণার পর ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ানো শুরু করেছে। কোনো কোনো ব্যাংক পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার শর্তে আমানত গ্রহণ শুরু করছে। ফলে ঋণের সুদহারও ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহার ছয়-নয় কার্যকর থাকায় গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে ছিল। হঠাৎ সুদহার এত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গাড়ি-বাড়ির জন্য ঋণ নেওয়া গ্রাহকদের পাশাপাশি বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। সামনে সুদহার বেড়ে কোথায় যাবে, তা বলতে পারছেন না ব্যাংকাররাও। ব্যাংকভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুন নুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। যখন ঋণ নেওয়া হয়, তখন সুদহার ছিল ৯ শতাংশ, মাসিক কিস্তি ছিল ৩৬ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতা বাড়েনি। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। তাতে সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে ঋণের কিস্তি বৃদ্ধির ঘটনা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে ঋণ করে ফ্ল্যাট কেনাটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’

ব্যাংকগুলো সাধারণত সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনা কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুদহার নির্ধারণ করে থাকে। যেসব ব্যাংক তারল্যসংকটে থাকে, তারা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে। আবার সামনে সুদহার আরও বাড়তে পারে-এই আশঙ্কায় ভালো ব্যাংকও উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। তবে প্রতিটি ব্যাংক কিছু আমানত উচ্চ সুদে গ্রহণ করে, আবার কিছু আমানতে সুদহার হয় অন্য ব্যাংকের মতোই। ঋণের ক্ষেত্রেও গ্রাহকভেদে সুদ কম-বেশি হয়।

বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংক সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার শর্তে আমানত সংগ্রহ করছে। ব্যাংকটির ঋণের সুদহার এখন সাড়ে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যাংক একীভূত করার খবরের পর এই ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের আমানত উত্তোলন হয়ে যায়। এ কারণে তারল্যসংকটে পড়েছে বেসরকারি এই ব্যাংক।

এ বিষয়ে কথা বলতে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল দেশের বাইরে আছেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। আবার গত দুই মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন আমানতকারীরা। এতে চাপে পড়েছে ব্যাংকটি।

প্রথম প্রজন্মের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ছয় বছরে টাকা দ্বিগুণ করার শর্তে আমানত সংগ্রহ করছে। ব্যাংকটির ঋণের সুদ বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ। আইএফআইসি ব্যাংকে আমানতের সুদ ১০ শতাংশে উঠেছে, ঋণের সুদ উঠেছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার শর্তে আমানত নিচ্ছে। তাদের ঋণের সুদ বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে তারল্য নিয়ে একধরনের চাপ আছে। আমরা সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণের শর্তে আমানত নিচ্ছি। ঋণের সুদ ১৪-১৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। সামনে প্রবাসী আয় বাড়লে সুদহার বাড়বে না।’

তৃতীয় প্রজন্মের যমুনা ব্যাংকে আমানতের সুদহার ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে উঠেছে, ঋণের ক্ষেত্রে সুদ নিচ্ছে সাড়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত।

চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংক পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণের শর্তে আমানত সংগ্রহ করছে। মধুমতি ব্যাংকও ছয় বছরে টাকা দ্বিগুণ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আমানত নিচ্ছে। মধুমতি ব্যাংকের ঋণের সুদ বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোক্তাঋণের সুদহার এখন সর্বোচ্চ সাড়ে ১৫ শতাংশে উঠেছে। দীর্ঘমেয়াদি আমানতে বেশি সুদ দেওয়া হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ ও ব্যাংকের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সুদহার নির্ধারণ করে থাকি। নিকট ভবিষ্যতে সুদহার আরও কিছুটা বাড়তে পারে।’

 এ ছাড়া নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকও পাঁচ বছর তিন মাসে টাকা দ্বিগুণ করার শর্তে আমানত গ্রহণ করছে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় জানিয়েছেন, বর্তমান তহবিল খরচ বিবেচনায় সুদের হার ১৪ শতাংশের নিচে থাকবে বলে তিনি আশা করেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) নেতারা ১৬ মে এক বৈঠকে সুদহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এ মন্তব্য করেন।

গত বছরের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হার) পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করে। এতে সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। মূল্যস্ফীতি না কমায় স্মার্ট পদ্ধতি তুলে দিয়ে সুদহার বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

Prothom alo

Exit mobile version