Site icon The Bangladesh Chronicle

পশ্চিমি চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ০৯:০৫

বাংলাদেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সে দেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নাক গলানো নিয়ে অভিযোগ ও সমালোচনায় সরব হচ্ছে হাসিনা সরকার।

শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র

 

বাংলাদেশে নির্বাচনের মুখে অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বরে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতে আসছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার দাবি, তাঁর সফরের আগেই নয়াদিল্লির চাহিদা-তালিকার সবই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কিছু বাকি থাকে, তবে তা ছোটখাটো বিষয় এবং দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ সূত্রের দাবি, সম্প্রতি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি ভারতকে দেওয়ার বিষয়টি দশ-পনেরো বছর আগেও কল্পনা করতে পারতেন না বাংলাদেশবাসী। কিন্তু সেটাও আজ সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনার সফরে বাংলাদেশ চাইবে, সে দেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা তথা পশ্চিমের যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় কূটনৈতিক ভাবে আওয়ামি লিগ সরকারের পাশে থাকুক ভারত।

বাংলাদেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সে দেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নাক গলানো নিয়ে অভিযোগ ও সমালোচনায় সরব হচ্ছে হাসিনা সরকার। মানবাধিকার প্রসঙ্গেও খোঁচা দিয়ে আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তার জন্য বিভিন্ন স্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ঢাকার উপরে চাপ তৈরি করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে ইইউ, ব্রিটেন, জাপান বাংলাদেশের গত বারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চাইছে, বন্ধু দেশ হিসাবে ভারত কূটনৈতিক ভাবে ওই দেশগুলির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুক। ঢাকার বক্তব্য, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতৃত্ব ভারতের হাতে, তাই পশ্চিমের কাছে নয়াদিল্লির বক্তব্যের গুরুত্ব রয়েছে।

বাংলাদেশের যুক্তি, রাতারাতি কোনও দেশ মানবাধিকার প্রশ্নে আদর্শ হয়ে উঠতে পারে না। আপাতত অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো জ্বলন্ত সমস্যাগুলির সুরাহার জন্য অল্প সময়ে অনেকটা পথ হেঁটেছে হাসিনা সরকার। কিন্তু এর পরের ধাপে যাওয়ার আগেই যদি পশ্চিম অর্থনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করতে চায় ঢাকাকে, তা হলে দেশটাই মৌলবাদের খপ্পরে চলে যাবে। বাংলাদেশে যে উদার আবহাওয়া রয়েছে, তা আর থাকবে না।

হাসিনার আসন্ন সফরে আরও যে বিষয়গুলি নিয়ে সাউথ ব্লকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত-হত্যা শূন্যয় নিয়ে আসা, তিস্তার নাব্যতা এবং প্রবাহকে বাঁচিয়ে রাখা, তিস্তা-সহ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির জলবণ্টনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। হাসিনা সরকার একরকম ধরেই নিয়েছে যে আপাতত তিস্তা চুক্তি করতে দেবেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তবুও নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনার আসন্ন বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আবেগের দিকটিকে বিবেচনা করে। সম্প্রতি তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের তরফে দু’টি খাল খননের খবর প্রকাশিত হওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ঢাকায়। বিষয়টি নিয়ে যদিও কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মহম্মদ আবুল হোসেন তিস্তায় খাল খনন নিয়ে কমিশনের অন্য সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন, তার কোনও উত্তর এখনও আসেনি। বাংলাদেশের তরফে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক আরও ঘনঘন করার প্রস্তাবও দেওয়া হবে।

ঢাকার দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার প্রধান কারণ বিএসএফের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ। দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ। উভয় দেশের বহু মানুষ নদী ভাঙনের কারণে খেত-খামার ও জীবিকা হারিয়েছেন। তাঁরা আন্তঃসীমান্ত গবাদি পশু ও পণ্য পাচারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঢাকার বক্তব্য, যদি কোনও অপরাধীও সীমান্ত পার হয়ে যায়, তা হলে তাকে গ্রেফতার করা বিচার করা হোক। কিন্তু হত্যা কেন করা হবে? এর ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী বিদ্বেষকে নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে হাসিনার।

Exit mobile version