- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ মে ২০২১
৪৩৭ রানের মতো লক্ষ্য পাড়ি দেয়া নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য ছিল না বাংলাদেশের। দেড় দিন ব্যাটিং করে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি ড্র করার সুযোগ ছিল মুমিনুল হকের দলের। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনে হয়েছে, জয় একটু দূরেই। ঝুঁকি নিয়ে হলেও দ্রুত রান তুলতে পারলেই মিলবে জয়ের দেখা।
এর ফল হাতেনাতে পেয়েছে বাংলাদেশ। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৭৭ রানের মধ্যেই ফিরে গেছেন বাংলাদেশের ৫ ব্যাটসম্যান। আলো স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। বাকি শুধু পঞ্চম দিন। জিততে হলে এই দিনে বাংলাদেশকে করতে হবে বাকি পাঁচ উইকেটে ২৬০ রান। যা অবিশ্বাস্যই। বলা চলে জয়ের পথে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কায় ডিক্লিয়ার দেয় ৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে। জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অল আউট হয় ২৫১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান, ডিক্লি.। বাংলাদেশের সামনে জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৩৭ রান।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম যথারীতি শুরু করেন দারুণ কিছু শটের মহড়ায়। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সুরাঙ্গা লাকমলকে বাউন্ডারি মারেন ব্যাকফুট পাঞ্চে। নতুন বলে শুরু করা অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো এক ইনসাইড আউট শটে। রান আসলেও তামিমের এসব শটে ছিল না টেস্টের আবহ।
মেন্ডিসই পরে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফেরান তামিমকে। স্টাস্পে পিচ করা বল সামান্য টার্ন করে তামিমের ব্যাটের একপাশে আলতো ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। টানা চার ফিফটির পর এবার তামিম আউট ২৬ বলে ২৪ করে। বাংলাদেশের দলীয় রান ৩১।
এই মেন্ডিসকে একটু পর ছক্কা মারেন সাইফ। বেশ কিছু শট খেলে এই ওপেনার চেষ্টা করেন ইতিবাচক থাকার। কিন্তু বেশি শট খেলার চেষ্টাই কাল হয় তার। বাঁহাতি স্পিনার প্রভিন জয়াবিক্রমাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কাভার পয়েন্টে। আগের তিন ইনিংসে বাজে খেলা সাইফ এদিন অন্তত কিছু রান করতে পেরেছেন। ৪৬ বলে তিনি করেন ৩৪ রান। তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি চারের মার।
চা বিরতির একটু আগে জয়াবিক্রমা থামান নাজমুল হোসেন শান্তকেও। উইকেটের ক্ষতে পিচ করে বল বিশাল টার্ন নিয়ে শান্তর ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে। ৪৪ বলে ২৬ রান শান্তর। তাও ভালো প্রথম ইনিংসের মতো ডাক মারেননি।
ভরসা ছিল চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহীম ও মুমিনুল হকের উপর। কিন্তু পারেননি তারাও। এই জুটির স্থায়ী ৫৫ বল, রান আসে ৩০। রমেশ মেন্ডিজের বাক খাওয়া বলে বোল্ড মুমিনুল। ৪৮ বলে ৩২ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
লিটনের সঙ্গে এরপর এগুতে থাকেন মুশফিকুর রহীম। এই জুটিতে আসে ৩৭ রান, ৫৮ বলে। দলীয় ১৭১ রানে পড়ে বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেট। মেন্ডিসের টার্ন নেয়া বলে দৃষ্টিকটু আউট মুশফিকুর রহীম। গ্লাভসে লাগা বল স্লিপে ক্যাচ নেন ডি সিলভা। ৬৩ বলে ৪০ রান করে ফেরেন মুশফিকুর রহীম।
এরপর লিটন আগাতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে। দু’বার জীবন পান লিটন। দুইবারই আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। দুইবারই রিভিউতে সফল বাংলাদেশ।
দিনের খেলার বাকি তখনো ১২ ওভার। আলো স্বল্পতায় বন্ধ থাকে খেলা। পরে আর খেলা মাঠেই গড়ায়নি। ৩৯ বলে ১৪ রানে লিটন দাস ও ২২ বলে ৪ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ আছেন অপরাজিত। বল হাতে এই ইনিংসে শ্রীলঙ্কার হয়ে রমেশ মেন্ডিস তিনটি, জয়াবিক্রমা দুটি উইকেট লাভ করেন। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন অভিষেক ম্যাচে মাঠে নামা জয়াবিক্রমা।
দুই উইকেটে ১৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। দ্রুত রান বাড়ানো ছিল তাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে সফল তারা। ৯ উইকেটে ১৯৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন অধিনায়ক করুনারত্নে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা করেন ৪১ রান। নিশাঙ্কা ও ডিকভেলা করেন সমান ২৪ রান। ম্যাথুস ও সুরঙ্গা লাকমল করেন সমান ১২ রান।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। মেহেদী হাসান মিরাজ দুটি ও তাসকিন-সাইফ নেন একটি করে উইকেট।