নরেন্দ্র মোদির সফরের জেরে উত্তপ্ত ও রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদি আসেন গত ২৬ মার্চ। তাঁর এই আগমন ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। এই উৎসব আনন্দে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন প্রতিবেশী মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের রাষ্ট্রীয় নেতারা। অন্যদের স্বাগত জানালেও বাংলাদেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদির আগমনকে দেখেছে ভিন্ন চোখে, ভিন্ন ভাবে। ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সশস্ত্র অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের মানুষ নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞ। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য হচ্ছে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। কিন্তু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যে নেতৃত্ব ও দল ভারতের ক্ষমতায়, তারা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি শুভদৃষ্টি পোষণ করে না বলেই মনে করা যায়। আর ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির বিগত ও বর্তমান আচরণ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অনুকূল না হওয়ায় তিনি এবং তার দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকারের উন্মত্ত মুসলিমবিরোধী নীতি ও কার্যকলাপ বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভকে তীব্রতর করে তুলেছে। একটি জনগোষ্ঠীর মনে ন্যায় বা অন্যায়ভাবে বিরূপ ক্ষোভ ও অসন্তোষ জন্ম নেয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে দায়িত্বশীল একটি সরকারের তরফ থেকে সে ঘৃণা ও অসন্তোষকে মোকাবেলার ভুল কৌশল। জাতির সৃষ্টির উৎস হিসেবে যে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়, তা আসলে সেন্টিমেন্ট বা জনগণের আবেগের ওপর নির্ভরশীল। ১৯৪৭ সালে যে জনগণ তদানীন্তন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের যাতনার কারণে পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারাই ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের থেকে পৃথক হয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অনুভূতি ছিল অনুকূল। পরবর্তীকালে সে অনুকূল মনোভাব কী কী কারণে প্রতিকূল হয়েছে সেই ইতিহাস সবারই জানা কথা। এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আগেও ছিল, এখনও আছে। সেই সাথে প্রকৃত ধর্মীয় চেতনা ও মানবিকতার অবস্থানও ছিল সুদৃঢ়। ভারতে ও এদেশে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল এবং আছে। কিন্তু তা যখন প্রকৃত ধার্মিক চেতনা ও মানবিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দেয়। ভারতে বিজেপি বা হিন্দুত্বনির্ভর উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির উদ্ভব সেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে সরকারি নীতিতে পরিণত করেছে। মৌলবাদী আরএসএস বিজেপির মূল আদর্শিক ভিত্তি। তারা বিগত প্রায় ৭৫ বছর গোঁড়া হিন্দুত্বের আগুন ছড়িয়েছে সারা ভারতে। এখন সেই আগুনে পুড়ছে গোটা ভারত।
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার মাধ্যমে ১৯৯২ সালে যে হিংস্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে বর্তমান মোদি দলের শুরু, তা মহীরুহ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারতের অন্যত্র যে ঐতিহাসিক মসজিদগুলো রয়েছে, সেগুলোর প্রতিও তাদের আক্রোশ। দিল্লির বিখ্যাত কুতুব মিনারকে তারা হিন্দুদের কীর্তি বলে জাহির করতে চায়। হাস্যকর শোনালেও, তাজমহলের মালিকানা পর্যন্ত দাবি করে তারা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ও জবরদখলকৃত কাশ্মিরকে এই মোদি সরকার ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত করেছে। নাগরিকত্ব আইন দিয়ে কোটি কোটি মুসলমানের আইনগত অধিকার অস্বীকার করতে চাইছে। আসামে ১৯ লাখ লোকের তালিকা তৈরি করেছে। তাদেরকে ‘বাংলাদেশী মুসলমান’ বলে চিহ্নিত করেছে। অপর দিকে, বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো মুসলমান এসব দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করলে তাদের নাগরিকত্ব নাকচ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ আরো তীব্র হয়েছে। গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সেখানে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। মোদি চিহ্নিত হন ‘গুজরাটের কসাই’ হিসেবে। নিরপেক্ষ তদন্তও মোদির বিপক্ষে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও মোদির প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। যে সেন্টিমেন্ট গুজরাটে মুসলমানদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে সেই সেন্টিমেন্টকে তীব্রতর করে মোদি ক্ষমতাসীন হয়েছেন। এই সময়ে গোমাংস ভক্ষণ, সংরক্ষণ, এমনকি ব্যবসা করতে গিয়ে মুসলমানরা হত্যার সম্মুখীন হয়েছে। মোদির সরকার মানুষকে ‘জয়রাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করেছে। এতে অস্বীকার করায় মুসলমানকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এই সে দিন তৃষ্ণার্ত মুসলমান ব্যক্তি ঢুকেছিল মন্দিরে পানি পানের জন্য। যেখানে মন্দির-মসজিদ হওয়ার কথা মানুষের জন্য, সেখানে ঐ মুসলমানকে গুরুতরভাবে আহত করা হয়। তারপর উত্তর ভারতের সব মন্দিরে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ‘মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ’- সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হলো। এ কাজটি স্মরণ করিয়ে দেয় কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত উক্তিকে- ‘মসজিদ মন্দিরে নেই মানুষের দাবি, মোল্লা পুরুত লাগিয়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি।’ মুসলমানদের কোনো যুগে মসজিদে প্রবেশ নিয়ে এরকম ঘটনা ঘটেনি। বরং রাসূলে করীম (সা:) মদীনার মসজিদে নববীতে খ্রিষ্টানদের উপাসনা করার অনুমতি দিয়েছেন। যাই হোক, যিনি মুসলমানদের এত সব নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য দায়ী, তার প্রতি এ দেশের সাধারণ ঈমানদার মুসলমানের ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে মোদির অপরাধের জন্য এ দেশের কোনো হিন্দুকে আঘাত করা এমনকি তাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলাও ইসলামসম্মত নয়। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ যখন ধ্বংস করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই এ দেশের গরিষ্ঠ মুসলমানদের তরফ থেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটে। তখন এ দেশে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলো অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হয়। তখন এ দেশ যাদের সাম্প্রদায়িকতার জন্য দায়ী ও চিহ্নিত করা হয়েছিল, তারা বরং বিবৃতি দিয়েছিল। বলেছিল, ভারতের লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করা হলেও এ দেশে একজন হিন্দুকে আঘাত করাও ইসলাম অনুমোদন করে না।’ অনেককে বিস্মিত করেছিল সেই বক্তব্য।
এরপরও নরেন্দ্র মোদির আগমনকে যারা স্বাগত জানাতে চান, তারা তা পারেন। এটাও সত্য, নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তি হিসেবে যাই করুন না কেন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি। তার নিরাপত্তা ও হেফাজত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তার অর্থ এই নয় যে, কেউ যদি মোদির বিরুদ্ধে তার রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ প্রকাশ করতে চায় তাতে বাধা দেয়া হবে। গোটা পৃথিবীতে এ কালচার রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও দু-এক জায়গায় কালো পতাকার সম্মুখীন হয়েছেন। সে দেশের সরকার সঙ্গতভাবেই প্রতিবাদকারীদেরকে নিরাপদ দূরত্বে হটিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে ‘হেফাজতে ইসলাম’ সাধারণ মুসলমানদের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে যে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত বলতে হবে। তার কারণ গণতন্ত্র আমাদেরকে কাউকে স্বাগত জানানোর অথবা না জানানোর অধিকার দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, প্রথমে ছিল আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নয়, একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক, ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী বিরুদ্ধে সেটি ছিল শুধুই ঘৃণা প্রকাশ। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে রক্তাক্ত করেছে। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে। উল্লেখ্য, মোদি-বিরোধী আন্দোলন কেবল হেফাজত বা ধর্মভিত্তিক সংগঠন নয়, ডান ও বাম ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও মোদির আগমনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রথম সমাবেশ করেছিল বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন সংগঠন। এসব সংগঠনের সাথেও পুলিশও সরকারপন্থী ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদিকে স্বাগত জানানো বা না জানানোর অধিকার মানুষের আছে। কিন্তু সে অধিকার দমনে বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারদলীয়দের কর্মকাণ্ড ন্যক্কারজনক। মোদি সরকারের উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ভারতেও আন্দোলন চলছে।’
বাংলাদেশ সরকার বিশেষত বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছে। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের বিরুদ্ধে; হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার ঘোষিত আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিল অনুসৃত নীতির প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা দৃশ্যত কেবলই ভারতের প্রশস্তিতে মশগুল। সরকার জনগণের সেন্টিমেন্ট বা আশা আকাক্সক্ষাকে ধারণ করবে। তারা তা না করে আনুগত্যের প্রতিযোগিতা করছেন। অথচ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও এদেশে দু-একটি অপ্রীতিকর ঘটনায় ভারতীয় হাইকমিশন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিজেই সেখানে হাজির হচ্ছেন। ১৯৮০ সালের দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্তর্গত গুরুদুয়ারা সঙ্কীর্ণ করে ফেলার চেষ্টার প্রতিবাদ জানাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নিজেই হাজির হন। আবার সাম্প্রতিক সময়েও তাদের হাজিরা লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশ সরকার এমন নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে যে, অসংখ্যবার সীমান্তে নাগরিক হত্যারও প্রতিবাদ জানাতে পারেনি। বারবার আমরা কেবল এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতির বয়ান শুনছি। এখন যখন বাংলাদেশের একদল মানুষ নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করছে, বিক্ষোভ করছে, তখন উচিত ছিল মানুষের ক্ষোভকে প্রকাশিত হতে দেয়া। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মান ও নিরাপত্তা বজায় রাখাও তাদের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে তারা সংযম ধারণ করতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা পূর্ণ শক্তির পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত খবরে দেখা যায় যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ১২ জন, হাটহাজারিতে চার জন এবং নারায়ণগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় একজন নিহত হয়েছে। এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। গুলি চলেছে নির্বিচারে। পুলিশ কেন এত নিষ্ঠুর হলো! এতগুলো মানুষের মৃত্যুর জন্য অবশ্যই তাদের দায় স্বীকার করতে হবে। ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, পুলিশ যদি সংযত হতো তাহলে তারা এই দায় এড়িয়ে চলতে পারতো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তারা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। ১৭ জনের মৃত্যু, অসংখ্য আহত এবং শত শত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা কি ধৈর্যের পরিচায়ক? সরকার একটি আকস্মিক সেন্টিমেন্টকে রাজনৈতিক লেবাস দিতে চাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, যেকোনো সরকার বিরোধী অবস্থানকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ বলে অভিহিত করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতার চেষ্টা হচ্ছে। হেফাজতের এসব সহিংসতায় জঙ্গি সংগঠন, জামায়াত এবং বিএনপির মদদ থাকতে পারে।’ আসলে মানুষের সেন্টিমেন্টকে না দেখে এসব থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। ‘রাজা যা বলে, পারিষদ বলে তার শতগুণ’। ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল সেভাবেই বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও পরাজিত শক্তি জামায়াত শিবিরের উগ্রপন্থীরা ঢুকে পড়েছে। তবে এরা যদি সত্যিকার অর্থে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বা জনমনের হদিস নিতে চায় তাহলে নিজেদেরই উপকার হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরকারের এই নিপীড়ন নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্বতঃস্ফূর্ত জনতার হরতাল প্রমাণ করেছে- এ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তিনি জনগণের সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে জনদাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশময় যেভাবে শান্তিকামী জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে তাতে সরকারের আখের রক্ষা হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। পীর সাহেব সারা দেশে গুম, হত্যা ও নৈরাজ্যের রাজনীতির পথ পরিহার করে ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেন যে, সরকার জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভে দিশেহারা হয়ে মানুষ হত্যার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা পুরো দেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার জানিয়েছেন, রাজধানীর পাঁচটি থানায় হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অর্থাৎ পরবর্তীকালে নিপীড়ন ও নির্যাতনের নমুনা স্পষ্ট হচ্ছে।
সরকার গণতন্ত্রের কথা বলে। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ গণতন্ত্রেরই ভাষা। মোদির আগমনের প্রতিবাদে আহূত বিক্ষোভে সরকার যে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। পরকে তুষ্ট করার জন্য নিজেদের দেশের মানুষকে হত্যা করা কোনো সঙ্গত ও সুন্দর আচরণ হতে পারে না। সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে অত্যাচারের পথে না গিয়ে রাজনৈতিক উপায়ে বিরোধ নিরসন করবে বলেই শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা। ২০১৩ সালে এর চেয়ে বড় ধরনের নৃশংসতার পরেও সরকার নমনীয় হওয়ার উদাহরণও আছে।