পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান। তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকও।
আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর বেসরকারি খাতের সাবেক ফারমার্স (বর্তমানে পদ্মা) ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরপরই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটির নাম পাল্টানো হয়।
পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালক।
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই ব্যাংকের কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে কারণে আমি সরে দাঁড়িয়েছি। চিকিৎসকেরা আমাকে দীর্ঘ সময় বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। যেহেতু পদ্মা ব্যাংকে সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে, সে কারণে ওই সব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তমতে সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। বলা হয়, কোম্পানিটির ৭০ কোটি ডলার (৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ আনতে ব্যাংক মধ্যস্থতা করবে। ২ সেপ্টেম্বর ডেল মরগানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পদ্মা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ডেল মরগানের চেয়ারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন।
এই বিনিয়োগ আনার স্বার্থে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৯০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে থাকা ব্যাংকটিকে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এ লোকসান না দেখানোর সুযোগও দেওয়া হয়। লোকসানের বিপরীতে ‘ইনট্যানজিবল অ্যাসেট বা অদৃশ্য সম্পদ’ সৃষ্টি করার সুযোগ পায় পদ্মা ব্যাংক, যা পরের ১০ বছরের মুনাফা থেকে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই বিনিয়োগ আর আসেনি।
এর আগেও ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। নগদ সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকয়ারমেন্ট) ও বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের (স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও) অর্থ জমা রাখার বাধ্যবাধকতায় ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মওকুফ করা হয় দণ্ড-সুদ ও জরিমানা।
বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ব্যাংকটি বড় অর্থের লোকসান গুনছে বলে জানা গেছে। এখন সরকারি খাতের ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর ও নতুন ঋণ দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোতেই সমাধান খুঁজছে ব্যাংকটি।
সাবেক ব্যাংকার ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চৌধুরী নাফিজ সরাফাত মোবাইলের টাওয়ার কোম্পানি, বিদ্যুৎ কোম্পানি, তারকা হোটেল ব্যবসা, গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক।
সূত্র : প্রথম আলো