বরিশাল
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় তাঁরা হতাশ নন; বরং তিনি যেদিন এলাকায় আসবেন, সে দিন বড় ধরনের জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
পঙ্কজ নাথ শিগগিরই এলাকায় ফিরবেন এবং দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা–কর্মী জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, এলাকার মানুষের কাছে এখনো ব্যাপক গ্রহণযোগ্য পঙ্কজ নাথ। এ ছাড়া দলে এমন অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন, যাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই।
ওই নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, পঙ্কজ নাথকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য পদে রাখা হলেও তাঁকে কখনো কোনো সভায় ডাকা হয়নি। তিনি কোনো সভায় যোগও দেননি। তাঁকে ওই কমিটিতে জেলার শীর্ষ নেতারাই রেখেছিলেন, আবার তাঁরাই বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে রেজল্যুশন পাঠিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাওয়ার কয়েক দিন আগে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ পঙ্কজ নাথকে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে কেন্দ্রে একটি রেজল্যুশন পাঠায়। দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠান।
কেন্দ্রে পাঠানো লিখিত রেজল্যুশনে অভিযোগ করা হয়, পঙ্কজ নাথ তাঁর নির্বাচনী এলাকা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দলের মধ্যে বিভেদ ও নিজের বলয় তৈরি করতে পুরনো এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করতে খুন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মারধর, কুপিয়ে জখম এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের অপমান-অপদস্ত করছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর হিজলা ও ১৮ সেপ্টেম্বর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সম্মেলন সংঘাতের আশঙ্কা করে কেন্দ্রে পাঠানো রেজল্যুশনে জেলা আওয়ামী লীগ দাবি করে, পঙ্কজ নাথকে দলীয় পদে রেখে ওই দুই উপজেলায় সম্মেলন করা হলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হতে পারে। দলের পুরোনো ও ত্যাগী নেতা–কর্মীরা যোগ্য পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেন। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা–কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনাও এতে উল্লেখ করা হয়।
২০১২ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ নাথ। ওই পদে থাকার সময় তিনি ২০১৪ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তাঁকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ দুই উপজেলায় দলীয় রাজনীতিতে খুব একটা খাপ খাওয়াতে পারছেন না পঙ্কজ নাথ। তিনি দুটি উপজেলাসহ প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি করে নিজের বলয় তৈরি করেন। এটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ দূরত্ব শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ তাঁর নেত্বত্বে থাকা জেলা নেতাদের সমর্থন পেয়ে আসছেন। দুই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
পঙ্কজ নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, পঙ্কজ নাথ এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে আছেন। দলের অভ্যন্তরে কিছু মতবিরোধ রয়েছে। এটি তো সারা দেশেই কমবেশি আছে।