Site icon The Bangladesh Chronicle

নেচারের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকায় ড. ইউনূস

নেচার–এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধের একাংশের  স্ক্রিনশট

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা সাময়িকী নেচার ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সোমবার এই তালিকা প্রকাশ করে নেচারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত বছর বিজ্ঞানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই তালিকার মাধ্যমে। একই সঙ্গে এগুলোর পেছনের কিছু ব্যক্তির গল্প উঠে এসেছে।

নেচারের সম্পাদকেরা শীর্ষ ১০ তালিকাটি তৈরি করেছেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতাগুলোর ওপর আলোকপাত এবং গবেষক-চিন্তকেরা আমাদের বিশ্বকে কীভাবে রূপ দিচ্ছেন, তাঁর স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে। এ বছরের অর্জনগুলোর মধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নতুন পদ্ধতি থেকে একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতিতে লেখা হয়েছে, একজন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর কাঁধে দেশের শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ভার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জাতির নির্মাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নেচার বলেছে, বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রাণঘাতী আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর দাবি ছিল এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের। এ কাজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় চট্টগ্রামে জন্ম হয় ড. ইউনূসের। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ষাটের দশকে তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। সেখানে তিনি পরিবেশবিষয়ক অর্থনীতির অগ্রদূত নিকোলাস জর্জেস্কু-রোগেনের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন ড. ইউনূস। নতুন দেশ গঠনে অবদান রাখার সংকল্প করেন তিনি। ড. ইউনূসের সবচেয়ে বেশি পরিচিতি রয়েছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাঁর উদ্ভাবনী কাজের জন্য। ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে বলে সমালোচনা রয়েছে। তবে ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, যৌক্তিকভাবে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হলে তা কীভাবে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্রদেরও জীবন বদলে দিতে পারে।

নেচারের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন জার্মানির ন্যাশনাল মেট্রোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদার্থবিদ একেহার্ড পেইক। টাইম অ্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সি বিভাগের প্রধান একেহার্ড পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।

তালিকায় থাকা কেইলিন খারাস একজন পিএইচডি গবেষক। কানাডার স্নাতকের শিক্ষার্থী ও পোস্টডক্টরাল গবেষকদের জন্য ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন তিনি।

সেরা দশে স্থান পাওয়া লি চুনলাই একজন ভূতত্ত্ববিদ। চাঁদের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশ থেকে চীনের চাং’ই-৬ চন্দ্রাভিযানে সংগ্রহ করা পাথর গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

প্রতারণা শনাক্ত করে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আনা আবালকিনা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা চুরি ও বেহাত হওয়া জার্নাল শনাক্তে অকুতোভয় এই নারী। রাশিয়ার সরকারে রোষানলে পড়া আনা এখন জার্মানিতে থাকেন।

তালিকায় থাকা চিকিৎসক ও গবেষক হুজি সু চীনের সাংহাইয়ের নেভাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির একজন রিউম্যাটোলজিস্ট। ‘অটোইমিউন ডিজিজ’ চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এ অসুখে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে।

সেরা দশে স্থান পাওয়া কানাডার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওয়েন্ডি ফ্রিডম্যান একজন জ্যোতির্বিদ। মহাবিশ্ব কত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলা কয়েক দশকের বিতর্ক তাঁর গবেষণার মধ্য দিয়ে অবসান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁকে ‘মহাজগতের রক্ষক’ (কসমিক রেঞ্জার) উপাধি দেওয়া হয়েছে।

নেচারের তালিকায় থাকা প্লাসিড এমবালাকে বলা হচ্ছে ‘ভাইরাস শিকারি’ (ভাইরাস হান্টার)। তিনি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল রিসার্চের একজন মহামারিবিশেষজ্ঞ। চলতি বছরের শুরুর দিকে মধ্য আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এমপক্স। তখন এই রোগ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন এমবালা ও তাঁর দল।

সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী কর্ডেলিয়া বারকে নেচার উপাধি দিয়েছে ‘জলবায়ু ক্রুসেডার’ (ক্লাইমেট ক্রুসেডার)। তিনি শীর্ষ ১০ তালিকায় রয়েছেন। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি। ওই মামলায় তিনি দীর্ঘ আট বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন। পরে গত ৯ এপ্রিল ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস তাঁর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

নেচারের শীর্ষ ১০ তালিকায় নাম থাকা রেমি ল্যামকে বলা হচ্ছে ‘আবহাওয়া নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গোয়েন্দা’ (এআই ওয়েদার স্লিথ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নির্ভুল ও দ্রুত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন এই যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষক।

prothom alo

Exit mobile version