নির্বাচন কীভাবে হবে, তা বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে: পঙ্কজ সরন

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলেছবি: খালেদ সরকার

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন বলেছেন, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে, সেটা দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ঠিক করবে। বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে মূল্যায়নের অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে জহুর হোসেন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ২০২৩–এ এক প্রশ্নের জবাবে পঙ্কজ সরন এসব কথা বলেন। বাংলা দৈনিক ভোরের কাগজ ‘বাংলাদেশ–ভারত প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের রোল মডেল’ শীর্ষক ওই বক্তৃতার আয়োজন করে। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে পঙ্কজ সরন ছাড়াও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারেক এ করিম বক্তৃতা করেন।

আলোচনার সঞ্চালক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের সাবেক কূটনীতিক পঙ্কজ সরন স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের ‘বন্ধুর পথের’ যাত্রার প্রসঙ্গ টানেন। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের আততায়ীর হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

পঙ্কজ সরন বলেন, ‘প্রতিটি দেশের জন্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি জানি। প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য ভালো পন্থা কোনটা, সেটা বাংলাদেশের জনগণের ঠিক করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে ভারতের সাবেক এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি আমাদের গণতন্ত্র শিখিয়েছেন, তারা সর্বদা আফগানিস্তানে গণতন্ত্র বা আফগানিস্তানে অবাধ নির্বাচনের কথা বলবেন। ভারত বলবে, দেখুন, আমরা একটি গণতন্ত্র। আমরা আমাদের গণতন্ত্র রপ্তানি করছি না। আমরা এটা স্বীকার করি যে প্রতিটি দেশের নিজস্ব পদ্ধতি আছে, প্রক্রিয়াও আছে।’

পঙ্কজ সরন বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলব যে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনাদের প্রতি আমাদের শুভকামনা থাকবে। আপনার সামনে একটি নির্বাচন আছে, যেটি সবচেয়ে ভালোভাবে করার উপায় আপনাদের রয়েছে। আপনাদের প্রতিষ্ঠান আছে, আপনাদের গণমাধ্যম আছে, আপনাদের সবকিছুই আছে। আপনারা যথাসাধ্য করে যান, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং নির্বাচনে যে ফলাফল আসবে, তা মেনে নিন।’

কোনো দেশের নির্বাচনে অন্য দেশের নাক গলানোর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বা ভারতে বা আফগানিস্তানে কিংবা অন্য কোনো দেশে নির্বাচন কীভাবে আয়োজন করা উচিত, সেটা নিয়ে ভারতসহ বিশ্বের কোনো দেশের কথা বলা উচিত নয়। এটা যে দেশে নির্বাচন হবে, সে দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। তা না হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌম জাতি হওয়ার মানে কী হলো?

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জহুর হোসেন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ২০২৩-এ উপস্থিত আলোচকেরা
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জহুর হোসেন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ২০২৩-এ উপস্থিত আলোচকেরাছবি: খালেদ সরকার

পঙ্কজ সরন বলেন, কাজেই জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করছে। নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে এবং তাদের প্রয়াসের প্রতি শুভকামনা থাকবে। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক এই হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা থাকবে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক। এটা যেন কোনোভাবেই অস্থিতিশীলতার দিকে না যায়।’

আজকের বিশ্বে কোনো একটি দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া মূল্যায়নের অধিকার কাউকে দেওয়া হয়েছে—এমনটি তিনি মনে করেন না বলে উল্লেখ করেন ভারতের সাবেক এই কূটনীতিক।

দুই দেশের কোনোটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কাছে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যেন জিম্মি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন পঙ্কজ সরন। স্মারক বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিংবা ভারতে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে যদি সম্পর্ক পরিবর্তন হয়, তবে বুঝতে হবে ওই সম্পর্ক ভঙ্গুর। দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য মৌলিক কিছু উপাদান দরকার। এ জন্য অংশীজন তৈরি করতে হবে, যারা হবেন ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি বা অন্য অংশের প্রতিনিধি।

ভারতের সাবেক এই হাইকমিশনার মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার মতো অনেক লোক আছেন দুই দেশে, যাঁদের উপেক্ষা করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, বাংলাদেশের কিছু হলে ভারতের ক্ষতি হবে এবং এর উল্টোটাও ঠিক। ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার জন্য দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নেতিবাচক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ইতিবাচক সম্পর্কে এবং এরপরে এটিকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছি।’

দুই দেশের সম্পর্ক কেন রোল মডেল, এ বিষয়ে তারিক এ করিম বলেন, ‘আমরা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই স্থলসীমান্ত ও সুমদ্রসীমানা নির্ধারণ করেছি, যা সারা পৃথিবীতে বিরল।’

দুই দেশের মধ্যে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অপরজনের চোখ দিয়ে বিষয়টিকে দেখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এটি সহজ নয়। কিন্তু এর মাধ্যমে পূর্ণ সমাধান না হলেও একটি সমঝোতা করা সম্ভব।

প্রথম আলো