জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমরা যারা সবাই ভূমিকায় ছিলাম, বলব, আসেন জাতির কমন ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই। মানবতাবিরোধী অপরাধের ফ্যাসিস্ট হাসিনা যা করেছেন, জাতির উপরে নির্বাচনের আগে তার বিচার দৃশ্যমান না হলে এ দেশের জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।
সংস্কার চাই, পিআর চাই। আমরা আরও দাবি করেছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য স্থানীয় নির্বাচন আগে দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার আয়োজিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এমন নতুন বাংলাদেশ আমরা চাই যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অনাচার-অবিচার থাকবে না, অন্নহীনের মর্মব্যথা, বস্ত্রহীনের আকুতি থাকবে না। অর্থপাচার, লুটপাট, আইন-আদালতকে অপব্যবহার করে ভিন্নমতকে দমন করা, আলেম-ওলামা, পীর, মাশায়েখকে কারাগারে ঢুকিয়ে দিয়ে হাজার হাজার লোককে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়েছে। নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। আলেম-ওলামাদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ক্রসফায়ার, রিমান্ড, জঙ্গি বানিয়ে ১৬-১৭ বছরের কালো যুগে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন আমরা পার করেছি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে বলেছি— নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে গেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ইলেক্টরাল সিস্টেম প্রয়োজন। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি আমরা করেছি, সেটা চালু করতে হবে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর যারা আছে, তাদেরকে সেখান থেকে বিদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য যে প্রচেষ্টা চলছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন তার চেয়ারম্যান, ড. আলী রিয়াজ তার কো-চেয়ারম্যান। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন সবাই সেখানে আমরা সরকারকে সাহায্য করছি। কিন্তু কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ কমন ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে এখনও দেরি করছি। অনেকে আমাদের ওপরে দোষ চাপান যে সংস্কারের জন্য আমরা পিআর পদ্ধতি দাবি করে নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চেয়েছি, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এসব সংস্কার, পিআর আর বিচারের কথা বললে তারা বলেন, আমরা নাকি নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের মধ্যেই এখন ১৮ কোটি মানুষের মুক্তি। জাতি এখন দুটি ভাগে বিভক্ত। কারা আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে একটি ইসলামী কল্যাণের শাসন চায় আর কারা চায় না— এটি সমান দুইভাবে ভাগ হয়ে গেছে। আমরা আল্লাহ তাআলার দ্বীনের পক্ষে থাকব।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মুফতি মোস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব হোসেন ও খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান। সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের খুলনা মহানগর সভাপতি মুফতি আমানুল্লাহ।