৩৬ জুলাই ২০২৪-এ বিপ্লবের পর একটু আধটু সময় যেতে না যেতেই দেশে ও বিদেশে আওয়ামী বন্ধুরা প্রস্তাব করছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কি ন্যায়সঙ্গত! অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রবীণদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিধাদ্ব›দ্ব আছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মাসখানেক আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা আইনসঙ্গত হবে না। উপদেষ্টা সাখাওয়াত সাহেব আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সাফাই গাইতে গিয়ে ‘স্বরাষ্ট্র’ হারালেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান না। ১৯ নভেম্বর প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ভারতের দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কোনো একটি দল বা আরেকটি দলকে বেছে নেয়ার জন্য আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি রাজনীতিকদের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করছি।’ আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে কোনো আপত্তি আছে কি-না ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা এই কথা বলেন। উত্তরটি ব্যাখ্যা করে তিনি আরো বলেন, ‘এটি ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটি করেছে, বলেছে- সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং ইতোমধ্যে তারা রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামতকে উপেক্ষা করব না।’ সঙ্গতভাবেই আইন ও নীতির ভিত্তিতে তাকে এই কথা বলতে হয়েছে। আমরা দেখছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায়ই রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ আয়োজন করছে। বিভিন্ন সময় উত্থিত বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সুতরাং তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে চান। যেহেতু তিনি সরকারপ্রধান এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থাটি তাকে আমলে নিতে হয়, সে কারণে আমরা তাকে অভিযুক্ত করব না। সরকারপ্রধান হিসেবে তাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হয়। বাংলাদেশের লাখো কোটি মানুষের মতো তিনিও অবগত আছেন, আওয়ামী লীগ কী জিনিস। তারা তাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থাটি চূড়ান্ত করে ফেলেছিল।
আমরা বলছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নবীন ও প্রবীণের ভিন্নতর উপলব্ধির কথা। প্রবীণরা আইন-কানুন ঘেঁটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে সঙ্গতি রেখে কথা বলাই প্রয়োজন। অপরদিকে যারা নবীন, যারা রক্ত দিয়ে আওয়ামী স্বৈরাচারকে পরাভ‚ত করেছে তাদের বক্তব্য স্বাভাবিকভাবেই রীতিনীতিকে অতিক্রম করে হবে বিপ্লবী এটিই স্বাভাবিক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটিকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে; এখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত।’ (প্রথম আলো, ১৯ নভেম্বর ২০২৪) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ জাতির গরিষ্ঠ নাগরিকরা নবীনদের সাথে একমত। নবীন নেতৃত্বের প্রতিনিধি সারজিস আলম বলেছেন, ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেবো না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী-নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘ছেলেদের রক্তের ওপর পা রেখে দিল্লিকে কিবলা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আকাক্সক্ষা জনগণের মুক্তির নিয়তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদেরকে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যারা ধারণ করে, যারা গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চায়, তারা ’২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবি ছাড়া আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আর কোনো দ্বিতীয় বক্তব্য দিতে পারে না।’ গণমাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীদের বক্তব্যও অনুরূপ। ‘অর্থের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হচ্ছে। এমনকি হত্যামামলা থেকে নাম বাদ দেয়া হচ্ছে। এমন অসংখ্য তথ্য ও ডকুমেন্টস আমরা পেয়েছি। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। যারা এই প্রজন্মের পালস বুঝতে পারছেন না, তারা বোকামি করছেন। যারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন মিশনে নেমেছেন, সাবধান হয়ে যান। রিয়েলি সাবধান হয়ে যান। নতুবা পরিণতি সামাল দিতে পারবেন না।’ অতএব বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন-নির্বাচন কিংবা অন্য পথে কোনোক্রমেই গ্রহণ করবে না ছাত্র-জনতা।
অনেক আগে লর্ড আর্থার বলেছিলেন, যারা নীতিতে বিশ্বাসী নয়, বিশ্বাসী একমাত্র স্বার্থে- তাদের উন্নতি হয় বটে কিন্তু পতনও আসে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তারা তো ন্যায়নীতি, রীতি-রেওয়াজ ও ভদ্রতা-সভ্যতার ধার ধারে না। বর্বর শক্তিতে ১৫ বছর শাসন করেছে আওয়ামী লীগ। সুতরাং ন্যায়ের কথা বলে, নীতির কথা বলে, অধিকারের কথা বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো দাবি আওয়ামী লীগ করতে পারে না। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান যথার্থভাবেই নীতিগত প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, ‘অনেকে বলে এরা নাকি এ দেশে রাজনীতি করতে চায়, এরা এ দেশে এসে আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। যারা গোটা জাতির বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ করেছে, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? এদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ভোটের ময়দানে ফিরে আসার। যদি তারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী হতো, তাহলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ফেয়ার নির্বাচন দিত। তারা তা চায়নি। তারা চেয়েছে মেরেকেটে যেভাবেই হোক তাদেরই ক্ষমতায় থাকতে হবে। রাজনীতি করবেন প্রিয় জাতির জন্য। যদি রাজকীয় মন নিয়ে জাতির জন্যই রাজনীতি করবেন, তাহলে আপনাকে পালাতে হবে কেন। কে পালায়? চোর পালায়, ডাকাত পালায়, খুনি পালায়, লুটেরা পালায়, গুমকারী পালায়, ধর্ষক পালায়। কোনো ভালো মানুষ পালায় না।’ এই পলায়নের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিচারের রায় তারাই তাদের ওপর দিয়ে ফেলেছেন। আর বাকি কৃতকর্মের পাওনাটা এখন তাদের পেতে হবে, সে অপেক্ষায় জাতি উন্মুখ হয়ে আছে।’
‘নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ’-এরকম শিরোনাম দিয়ে যদি একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করা যায়, তাহলে আমরা দেখব এর ‘জন্মই আজন্ম পাপ’। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে মারামারি আর হাঙ্গামার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম। ১৯৪৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারা সেই শক্তি প্রয়োগের নগ্ন নীতি থেকে কখনোই বের হতে পারেনি। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে তারা ৩৩ কে ৯৯ করেছে। সে সময় আওয়ামী লীগ ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। স্বাভাবিক নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা জালিয়াতি, কারসাজি ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ-তাকে নিরঙ্কুশ করেছে। ১৯৭১ সালের বিজয় লাভের পর যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে, সেখানেও তারা একই উপায়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভোলার একটি আসনে মেজর হাফিজের পিতা ডাক্তার আজহার ছিলেন জাসদ প্রার্থী। তিনি এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে, সেখানে শেখ সাহেব প্রার্থী হন। তাতেও নিশ্চিত না হয়ে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা নির্বাচনের দিন সকালে তাকে হাইজ্যাক করে। মেজর জলিল বরিশালের উজিরপুরের আসনে জয়লাভ করেন। ফলাফল বদলে দিয়ে হরনাথ বাইনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দাউদকান্দিতে খন্দকার মোশতাক আহমেদ পরাজিত হন। হেলিকপ্টারে ভোটের বাক্স ঢাকায় এনে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। যখন দেখল তারা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই, তখন তারা সব দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে।
১৯৭৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের কৃপায় আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর অতিক্রান্ত হলে ১৯৯৬ সালে আবার তারা ক্ষমতায় ফিরে আসে। সেখানেও সহজ সরল পথ নয়, জটিল-কুটিল পথ তৈরি করে তারা ক্ষমতাসীন হয়। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিভাজনে তারা সক্ষম হয়। সেটিই তাদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব ঘটিয়ে এক-এগারোর সরকারকে নিয়ে আসে তারা। ২০০৮ সালের শেষ দিকের নির্বাচনে তারা স্বাভাবিক বিজয় লাভ করেনি। বাইরে সব ঠিকঠাক, ভেতরে সদরঘাট। এই নির্বাচন সম্পর্কে প্রকাশিত যাবতীয় তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রমাণ করে, ওটা ছিল সাজানো নির্বাচন। লন্ডনের দ্য ইকোনোমিস্টের ভাষায়- ‘বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা এবং তাদের রণকৌশলে একটি প্যাকেজ ডিলের আওতায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।’ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব গভীরভাবে অনুধাবন করে যে, কোনো কালে কোনোভাবে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই তাদের। তাই ২০১১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে তারা। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে। আন্তর্জাতিকভাবে তারা প্রতিশ্রুতি দেয় যে, আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবিলম্বে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সে কথা রাখেনি তারা। ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘আমায় বিশ্বাস করুন’। তিনি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। দিনের ভোট রাতে নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অসম্ভব করে তুলেছিলেন। ডামি নির্বাচন দিয়ে রিয়াল নির্বাচন হতে দেননি। এভাবে ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারিত অধ্যায়ের বিশ্লেষণ কিসের প্রমাণ দেয়? তারা গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। সুতরাং ভবিষ্যৎ নির্বাচন ব্যবস্থায় তাদের অংশগ্রহণ তারাই নিঃশেষ করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদ তথা নাৎসিবাদের অনুসরণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যারা বিপর্যস্ত করেছে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার তারাই বিনষ্ট করেছে।
আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতাচ্যুত এবং আইনের খড়গ যেহেতু তাদের ওপর নিপতিত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এখন তাদের পক্ষে কাই-কুই করছে। কিন্তু প্লেটোর ভাষায় আমাদের প্রশ্ন- যাদের হাতে মানুষের জীবন-সম্পদ-সম্মান নিরাপদ নয়, তাকে কি বন্দুক ফেরত দেয়া যায়? মানবাধিকার তো মানুষের জন্য, দানবের জন্য নয়। দানব রূপে আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরে যে হত্যা-গুম, হামলা-মামলা দিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে তারা কি মানবাধিকার দাবি করতে পারে? তবে হ্যাঁ, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ নেই তাদের রেহাই দেয়া যেতে পারে। তবে তারা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে যেসব অন্যায় অপরাধ করেছে সে কারণেই ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তাদের জন্য নিষিদ্ধ থাকাই ন্যায়ানুগ। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিধি-বিধান প্রণয়ন করছে।
এখন দেখতে হবে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণ কী কী করতে পারে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হতে পারে না। সরকার তথা সব পক্ষের এক্ষেত্রে করণীয় অনেক। আইনি প্রক্রিয়ায়, জনগণের ক্ষুব্ধ প্রতিরোধ দ্বারা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দ্বারা আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে হবে। আর তা না হলে তারা নানা বেশে, নানা কারসাজিতে এবং নানা ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ও নির্বাচনে ঢুকে পড়বে। আমরা সবাই জানি, বিগত ১৫ বছরে ক্ষমতাশীল থাকার কারণে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তাদের গভীর সংযোগ রয়েছে। লুণ্ঠনের অর্থনীতি দ্বারা তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে জনগণের একটি অংশ এখনো আওয়ামী ঘোরে আচ্ছন্ন রয়েছে। শেখ হাসিনার কূটবুদ্ধি ও প্রতিবেশীর আশকারা এই ঘোর তৈরি করেছে। তাই আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয়-কমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে ছাত্র-জনতার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। প্রবীণ ও নবীনের দূরত্বে উভয় সঙ্কটে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরে বিএনপি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা প্রত্যাশা করি, সংস্কার ও ফ্যাসিবাদ বিলোপের চলমান যাত্রায়ও বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন প্রেম-প্রীতির স্থান নেই, ঠিক তেমনি আমরা এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধে লিপ্ত। সে যুদ্ধ সর্বাত্মক। পানিতে, মাটিতে ও আকাশে সে যুদ্ধ পরিব্যাপ্ত। ক্ষমা নেই, ওদের ক্ষমা নেই। সুকান্তের কবিতাকে একটু-আধটু পরিবর্তন করে আমাদের উচ্চারণ হোক- ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/ স্বজন হারানো গোরস্তানে তোদের কবর দিবোই।’
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Nayadiganta