নির্বাচনের প্রস্তুতি মধ্য নভেম্বরে তফসিল

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব না কমলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিলের আগে সব ধরনের প্রস্তুতির কাজ গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের উপকরণ কেনা প্রায় শেষ। মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। শুরু হয়েছে ভোট সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও। এদিকে ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক প্রচারপত্র ও ছাপার কাজ সরকারি মুদ্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চলছে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের অ্যাপ তৈরির কাজও। ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় ও কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তার অংশ হিসেবে এবার গণমাধ্যমের ৩৮ জন সম্পাদকের সঙ্গে বসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। আগামী ২৬শে অক্টোবর নির্বাচন ভবনে ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করেছে ইসি। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে ৩০শে অক্টোবর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি।

আর সংসদ ভোট সফল করতে ১১ এজেন্ডা নিয়ে আগামী ১লা নভেম্বর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি শেষে ভোটের পথে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার কার্যক্রম শেষ ধাপে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন চায় সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আনতে ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো আছে। আমি কোনো সমস্যা দেখি না। মানুষ জানতে চায় কবে ভোট হবে। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, জানুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আইনশৃঙ্খলা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা ডেকেছে ইসি: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে আগামী ৩০শে অক্টোবর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার; পুলিশ মহাপরিদর্শক; র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, এসবি’র অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শককে ওই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রোববার ইসি’র নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানের স্বাক্ষরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে করণীয় নির্ধারণে ৩০শে অক্টোবর বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশন ভবনের সভাকক্ষে এই সভা হবে।

৩০শে অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের পর ১লা নভেম্বর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় সভায় বসবে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ওইদিন বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে বৈঠকটি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিবকে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন ইসি’র নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান। চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের জন্য ‘করণীয় নির্ধারণ ও সমন্বয় সহজীকরণের লক্ষ্যে’ ওই সভায় নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত থাকবেন।

সভার আলোচ্যসূচিতে যা রয়েছে: ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার, পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্রে আনা-নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, নির্বাচনী প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সহায়তা প্রদান, পোস্টাল ব্যালটে ভোটপ্রদানের বিষয়ে সহযোগিতা, নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ, ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রদান বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শোডাউন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ। আলোচ্যসূচিতে আরও রয়েছে, বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা, দৈনন্দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা, নির্বাচনী এলাকায় বিদ্যমান নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী অপসারণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া।

মানবজমিন