Site icon The Bangladesh Chronicle

নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, বাজারের দুষ্টচক্র ভাঙুন

logo

প্রকাশ : শনিবার ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৭

নিত্যপণ্যের বাজার ফের ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীরা যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়া পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকে এটিকে গত ১৫ বছরের ধারায় ফেরার আলামত হিসেবে দেখছেন।

গত এক-দেড় মাস ধরে প্রায় সবধরনের চালের দাম বাড়তি। সম্প্রতি হঠাৎ বেড়েছে মুরগি, ডিম ও পেঁয়াজসহ প্রায় সব সবজির দাম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সরবরাহ ঘাটতির কথা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে ফসলহানি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন এবং মাঠপর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারে।

কিন্তু বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সহযোগী অনেক দৈনিকের অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে বৃষ্টিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন। কার্যত বৃষ্টির কারণে সরবরাহে তেমন ঘাটতি হয়নি। ফসলের বড় ধরনের ক্ষতির খবরও পাওয়া যায়নি; বরং বাজারে বেশির ভাগ পণ্যের সরবরাহ ঠিক আছে।

শুধু ব্যবসায়ীরা নন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক মহলও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকে সরকারের ব্যর্থতার এবং জনগণের আশাভঙ্গের দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছে। সত্য বটে, জিনিসের দাম কিছুটা বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ৩০ টাকা বেড়ে ডজন ১৫০ টাকায় উঠেছে। পেঁয়াজের দাম দুই সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে। স্বৈরাচার পতনের পর যে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকায় নেমেছিল, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম বাড়িয়ে এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। অথচ ঢাকা বা চট্টগ্রামের আড়তে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বড় বড় পাইকারি ব্যবসায়ীর দুষ্টচক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা যাচ্ছে। এ চক্র কয়েক দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে বলে সংবাদপত্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে সবজি বাজারের অস্থিরতা। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি প্রায় নেই। কিছু সবজির দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছে। একমাত্র পেঁপে, পটোলের মতো দু-একটি সবজি মিলছে ৬০ টাকার মধ্যে।

আসলে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসঙ্গত তেমন কারণ নেই। মাস দুয়েকের মধ্যে বাজারে শীতের সবজি আসতে শুরু করবে। প্রতি বছর এ সময়ে মৌসুমি শূন্যতায় কিছু সবজির দাম একটু বাড়ে। এবার বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। এটি রীতিমতো অস্বাভাবিক। আদা, এলাচের মতো মসলার দামও অনেকটা বেড়েছে।

জিনিসপত্রের বাড়তি দামে বেকায়দায় পড়েছে ক্রেতাসাধারণ। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে না পারায় তারা বিপাকে পড়েছেন। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ ফের গত ১৫ বছরের মতো দুর্ভোগে পড়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছে। এর কারণও আছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশের রাজনীতি এখনো সুষ্ঠু ধারায় ফেরানো সম্ভব হয়নি। স্বৈরাচারের দোসরদের বিতাড়ন ও বিচার করতে না পারায় সবকিছুতে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঘোলা পানির সুযোগ নিয়ে পতিত সরকারের সমর্থক, দোসররা পুরনো চেহারায় মাঠে নামার অপচেষ্টা করছে। বাজারে অস্থিরতার সাথে এ অনিশ্চয়তার যোগ আছে।

Exit mobile version