কথাটা তাহলে কে বলেছেন? কে বলেছেন মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড কিংবা মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহরা নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকিরের পরিচালনায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে চাননি?
কাল সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে ও সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে অভিযোগটা অমূলকই মনে হয়েছে। ২৫ এপ্রিল মিরপুরে অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার লিগের আলোচিত ম্যাচের দুই ক্লাব, খেলোয়াড়, বিসিবির লিগ পরিচালনাকারী বিভাগ সিসিডিএম—সব পক্ষই বলেছে, এ রকম কোনো আপত্তি ম্যাচের আগে বা ম্যাচ চলাকালেও তোলা হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, ‘আমি বা আমাদের কোনো খেলোয়াড় এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলিনি এবং কোনো আপত্তিও জানাইনি। আমি বরং এটা দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছি যে একজন নারী আম্পায়ার এত দূর এসেছেন এবং আমাদের দেশ থেকে তিনি আইসিসির প্যানেল আম্পায়ার হয়েছেন। এ জন্য আমি তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছি।’
মুশফিক বলেছেন, দুই ক্লাবের পক্ষ থেকে যদি কিছু বলা হয়েও থাকে, সেটা সাথিরা জাকির নারী আম্পায়ার বলে নন, তা হতে পারে এ রকম বড় ম্যাচে লিগে কারও অন ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হচ্ছে দেখে। ‘তিনি মেয়ে বলে নন, এই ম্যাচে একজন পুরুষ আম্পায়ারের অভিষেক হলেও হয়তো প্রশ্নটা উঠত,’ বলেছেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার।
মাহমুদউল্লাহরও বক্তব্য একই। চট্টগ্রাম থেকে কাল রাতে মুঠোফোনে জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘ম্যাচ শেষে আমি তো ওনাকে (সাথিরা জাকির) আরও অভিনন্দন জানালাম! সাধুবাদ জানিয়ে বলেছি, “খুব ভালো আম্পায়ারিং করেছেন।” আমি, মুশফিক, তামিম…আমরা এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, সবাই নিশ্চয়ই বুঝবেন, আমরা এ রকম কিছু করার মানুষ নই। তারপরও কী চিন্তা করে এসব বলা হয়, বুঝি না। এটা ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর।’
মুশফিকের দল প্রাইম ব্যাংক এবং মাহমুদউল্লাহর দল মোহামেডানের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে একই দাবি। প্রাইম ব্যাংক তো কাল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ রকম একটি বিষয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের নাম জড়ানোকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব প্রগতিতে বিশ্বাসী এবং সব লিঙ্গ-ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মাঝেমধ্যে ম্যাচ চলাকালে আম্পায়ারদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খেলোয়াড়েরা মাঠেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন, যা খেলারই অংশ। প্রকাশিত খবরে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট আম্পায়ারের অধীনে ম্যাচ খেলতে চায়নি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন।’
ক্লাবের ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেমও জানিয়েছেন, নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় ম্যাচ খেলতে তাঁদের কোনো আপত্তি ছিল না এবং এ নিয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগও করা হয়নি। মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘নারী আম্পায়ারের অধীনে খেলব না, এমন কিছু আমরা বলিনি। এ ব্যাপারে কারও কাছে কোনো অভিযোগও মোহামেডান করেনি। পুরোটাই মনগড়া।’
তবে দুজনই বলেছেন, বড় ম্যাচ ছিল বলে এই ম্যাচে অভিজ্ঞ আম্পায়ার আশা করেছিল দুই ক্লাব। সাথিরা যদিও এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন, তবে প্রিমিয়ার লিগে এর আগে অন ফিল্ড আম্পায়ারিং করেননি। সে জন্যই মাঠে তাঁকে দেখে অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। তবে এ নিয়ে কারও আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ ছিল না।
তাহলে দুই ক্লাব বা তাদের ক্রিকেটাররা নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় খেলতে চান না—এ আলোচনার সূত্রপাত কোথা থেকে? এই বারুদে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে আসলে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার আহমেদের একটি বক্তব্য। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘বিসিবি মহিলা আম্পায়ার নিয়োগ করায় তারা (দুই ক্লাব) অসন্তুষ্ট হয়েছে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘তারা (দুই ক্লাব) আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবে সিসিডিএমের কাছে অভিযোগ করেছে।’
কিন্তু ইফতেখার আহমেদের এমন বক্তব্যের দায় নিতে চাইছে না সিসিডিএম। সিসিডিএম প্রধান মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন চৌধুরী কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সিসিডিএমের কাছে কোনো ক্লাব বা ক্রিকেটার কোনো অভিযোগ করেনি এবং সিসিডিএমও এমন কোনো অভিযোগের কথা আম্পায়ার্স কমিটির কাউকে জানায়নি।’ একই কথা বলেছেন ম্যাচের দিন মাঠে থাকা সিসিডিএমের অন্য কর্মকর্তারাও।
তাহলে আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান কোথা থেকে জানলেন, নারী আম্পায়ার নিয়ে দুই ক্লাব সিসিডিএমে অভিযোগ করেছে? কাল এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘মাঠে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই আমাকে এটা জানিয়েছেন। সিসিডিএম থেকেও আমি শুনেছি। তবে কে বলেছে, তার নাম বলা যাবে না।’
তবে ইফতেখার আহমেদও বলেছেন, এ নিয়ে কোনো ক্রিকেটারের দিক থেকে কোনো আপত্তি ছিল না, ‘ক্রিকেটারদের দিক থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। ম্যাচ শেষে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিমরা জেসিকে (সাথিরা জাকির) অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে—ওয়েল ডান।’
prothom alo