Site icon The Bangladesh Chronicle

নামে আন্তর্জাতিক কিন্তু মানে ক্রম নিম্নমুখী


পাকিস্তান শাসনামলে তেজগাঁও বিমানবন্দর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিমানবন্দর ছিল। তেজগাঁও বিমানবন্দরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকরা আকাশপথে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে নির্মাণ করে। যুদ্ধ অবসানের পর ১৯৪৫ সালে তেজগাঁও বিমানবন্দরটিকে বেসামরিক রূপ দেয়া হয়। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য অবসানে ঢাকায় তিনটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পগুলো হলো কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় সংসদ ভবন ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এ তিনটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬৮ সালে চালু হয়। অপর দু’টি প্রকল্পের অবকাঠামো দাঁড় করানো হলেও অভ্যন্তরীণ ও আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্ত না হওয়ার কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরটি অর্ধেক সম্পন্ন অবস্থায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধে এ বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮০ সালে কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামানসুরে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১০ সালে বিমানবন্দরটির নাম পরিবর্তন করে উপমহাদেশের ইসলাম ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম হজরত শাহজালাল রহ:-এর নামানুসারে এর নামকরণ করেন।

১৯৮০ সালে বিমানবন্দরটি চালু-পরবর্তী এটির সেবার মান ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে যাত্রীসাধারণ মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিল। একটি স্বাধীন দেশের রাজধানীর প্রধান বিমানবন্দর হওয়ায় এটির ব্যস্ততার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকলেও সে অনুসারে যাত্রীসেবা ও সুযোগ সুবিধার বৃদ্ধি না ঘটায় বিমানবন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হতে থাকে।

বর্তমান বিশ্বে যেকোনো দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে আগমন ও প্রস্থানে আরোহণ ও অবতরণে বিমানবন্দরের সেবার মান ও সুযোগ সুবিধার ওপর দেশটি কতটুকু উন্নত এবং দেশের সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহ কতটুকু জনবান্ধব তা বোঝা যায়। উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় বিমানে আরোহণ ও বিমান থেকে অবতরণ উভয় ক্ষেত্রে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যাত্রা শুরু ও শেষের পর দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

আমাদের দেশের প্রধান বিমানবন্দরটির পরিষেবা নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা মোটেও সন্তুষ্ট নয়; তবে ভিআইপি যাত্রীদের কথা আলাদা। যেসব সাধারণ যাত্রী বিদেশ গমন করেন তাদেরকে শহরের তীব্র যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৩ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্টিং এর সময় হতে অন্যূন ২-৩ ঘণ্টা পূর্বে নিজ আবাসস্থল থেকে যাত্রা শুরু করতে হয়। বিমানবন্দর পৌঁছানোর পর বিদেশগামী যাত্রীরা প্রথম যে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তা হলো যাত্রীদের লাউঞ্জের প্রবেশমুখে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশাধিকার পেতে হয়। লাউঞ্জে প্রবেশের জন্য বিমানবন্দরের ১ ও ২নং দুটি টার্মিনালের জন্য দুটি প্রবেশমুখ থাকলেও কোন প্রবেশমুখ দিয়ে প্রবেশ করলে কোন বিমান সংস্থার ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক হবে তা প্রবেশমুখে কর্তব্যরত বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাদের অধিকাংশই জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। লাউঞ্জের প্রবেশমুখ দিয়ে প্রবেশের পর যাত্রীদের ইচ্ছাপূর্বক লাগেজ (মালামাল) স্ক্যানিংয়ের সময় ধীরগতির মুখে ফেলে অহেতুক বিলম্বের কারণের উদ্ভব ঘটানো হয়। বিদেশগামী যাত্রীরা দীর্ঘ লাইন ও লাইনের সম্মুখপানে অগ্রসরের ধীরগতি দেখে নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে না পারার আশঙ্কায় যখন অনেকটা হতবিহবল হয়ে পড়েন এমন সময় দেখা যায় বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন অথবা তাদের দালালরা সহজে প্রবেশাধিকার দিয়ে স্ক্যানিং করিয়ে দেয়ার বিনিময়ে নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। যাত্রীদের একটি বড় অংশ অনন্যোপায় হয়ে এজেন্সির লোকজন বা তাদের দালালদের নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দেয়ার পর তাদের প্রবেশাধিকার ও স্ক্যানিং নিমেষেই সম্পন্ন হয়।

দেশের ভিআইপি যাত্রীরা সাধারণ যাত্রীদের ন্যায় দুটি লাউঞ্জের প্রবেশমুখ দিয়ে লাউঞ্জে প্রবেশ করে বিমানবন্দর ব্যবহার করেন না। তাদের জন্য রয়েছে একাধিক ভিআইপি লাউঞ্জ। তারা তাদের দাফতরিক সরকারি গাড়িযোগে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের গাড়ি বারান্দায় অবতরণ পরবর্তী ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে তাদের বিদায় জানাতে আসা আত্মীয়পরিজন এবং নিম্নপদস্থ সহকর্মীদের সাথে খোশগল্পে মত্ত হন। ইত্যবসরে তাদের দফতরের প্রটোকলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি লাগেজের স্ক্যানিং, চেক ইন ও ইমিগ্রেশন বিষয়ক কার্যাদি সম্পন্ন করে পাসপোর্টসহ বিমানে আরোহণের জন্য প্রয়োজনীয় বোর্ডিং কার্ড তাদের হাতে হস্তান্তর করেন। বিমানের সাধারণ যাত্রীদের আরোহণ সম্পন্ন হওয়ার পর ফ্লাইটের কর্মচারী বিমান ছাড়ার আগ মুহূর্তে তাদের আরোহণ সম্পন্নের জন্য নিয়ে যান। আরোহণের ক্ষেত্রেও দেখা যায় সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আরোহণ সম্পন্ন করতে হয়।

সাধারণ যাত্রীরা বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে যে ধরনের হয়রানি ও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন এবং অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সমস্যার সুরাহায় সচেষ্ট হন ভিআইপি যাত্রীদের কেউ অনুরূপ সমস্যার সম্মুখীন হলে দীর্ঘকাল পূর্বেই এটির সমাধান হয়ে যেত এবং সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটত। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, সরকারের পদস্থ ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ যাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব সদাসর্বদা জনসাধারণকে সর্বাত্মক সেবা প্রদানে সচেষ্ট হওয়া তারা তা ভুলে গিয়ে নিজেদের সেবা নিশ্চিতেই সদা তৎপর।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর খুবই পরিচ্ছন্ন এবং আগমন ও প্রস্থানের যেকোনো যাত্রী টয়লেট ব্যবহার পরবর্তী দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী সাথে সাথে তা ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করে দিচ্ছেন। আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তর মানসম্মতভাবে পরিচ্ছন্ন নয়। আর টয়লেট শুধু অপরিচ্ছন্নই নয় এর মধ্য হতে উৎকট গন্ধ নির্গত হয়। কর্তৃপক্ষের বেতনভোগ পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও তাদের দায়িত্ব পালন দায়সারা গোছের এবং তাদের ওপর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে।

পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাঁটাচলায় সাবলীল নন অথবা অসুস্থ যাত্রীদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা থাকে। হুইল চেয়ার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি বিমান সংস্থার বেতনভোগ কর্মচারী। অন্যান্য দেশের হুইল চেয়ার পরিচালনাকারীদের দেখা যায় আচরণ ও কর্মে খুবই অমায়িক ও আন্তরিক। কিন্তু আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হুইল চেয়ার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারীদের ব্যবহার ও আচরণ অমায়িক হলেও এরা যাত্রীদের নিকট হতে তাদের বেতন ভাতার অপ্রতুলতার কথা বলে বকশিশ হিসেবে অর্থের যাচনা করেন। অর্থের পরিমাণ তাদের কাঙ্ক্ষিত মানের না হলে যাত্রীর সামনেই আক্ষেপ করতে দেখা যায়।

বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের চেক ইন-এর কাজ বিভিন্ন বিমান সংস্থার পক্ষে এ দেশীয়রা পালন করে থাকে। একজন যাত্রী ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশ ভেদে কত কেজি পরিমাণ মালামাল নিতে পারবেন তা টিকিটে উল্লেখ থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন যাত্রীর জন্য নির্ধারিত ওজনের ৩-৫ কেজি পর্যন্ত বেশি হলে কোনো প্রকার অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া মালামাল গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালামালের ওজনের প্রাপ্যতা বিষয়ে প্রায়ই বিভিন্ন বিমান সংস্থার নিয়োজিত লোকজনের দ্বারা যাত্রীদের হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এরা অতিরিক্ত ১ কেজি হলেই মালামাল গ্রহণে অস্বীকৃতি করে আবার তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ প্রদান করলে অতিরিক্ত ১০ কেজিও বাধা হিসেবে দেখা দেয় না। বিভিন্ন বিমান সংস্থার এসব লোকদের দুর্নীতি দেখার দায়িত্ব যাদের তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।

বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার স্থিতিশীল রাখতে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন তারা হলো প্রবাসে কর্মরত শ্রমিক। এদের অনেককেই কোনো ধরনের যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে বহির্গমনে কর্মরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা হেনস্তা হতে হয়। এ ক্ষেত্রেও নির্ধারিত অর্থ যোগ ঘটলে যাত্রায় বাধার নিস্তার ঘটে। এ বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নজরে নিলে সমস্যাটির সুরাহাসহ হয়রানির অবসান হবে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যেসব যাত্রী বিভিন্ন দেশ হতে বিমানবন্দরটিতে অবতরণ করেন এদের আগমনের স্থলভেদে যাত্রায় ট্রানজিটসহ বা ব্যতিরেকে ন্যূনতম ১-৪৮ ঘণ্টা অবধি সময় লাগে। পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ক্ষেত্রে ফ্লাইট ছাড়ার ৩ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট করতে হয়। একজন যাত্রীকে এ ৩ ঘণ্টার বিষয়টি মাথায় রেখে তার আবাসস্থল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সময়ের হিসাব করতে হয়। দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত নিদ্রাহীন সাধারণ যাত্রীদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর শৃঙ্খলাবিহীনভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও অধুনা সংযোজিত স্বাস্থ্য সনদবিষয়ক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে লাগেজ হাতে পেতে ৩ ঘণ্টা অবধি সময় নষ্ট হয়। দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত এ ধরনের যাত্রীদের পক্ষে এমন দুর্ভোগ পোহানো খুবই বেদনাদায়ক।

অবতরণ লাউঞ্জ হয়ে বিমানবন্দর এলাকা হতে বাইরে আসার পর যেসব যাত্রীর জন্য নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা থাকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থার কারণে সেটি যাত্রীর নিকট পৌঁছাতে অর্ধঘণ্টা সময় লেগে যায়। আর যেসব যাত্রীর নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা থাকে না তাদের ভাড়ায়চালিত গাড়ির দালালদের দৌরাত্ম্যে পড়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। ভাড়ায়চালিত গাড়ির চালকদের কেউ কেউ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে আগে হতে ঠিক করা লোকদের সাহায্যে ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনার অবতারণায় সর্বস্ব লুট করে নেয়। এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও যাত্রীদের অসাধু চালকদের খপ্পর হতে রেহাই ঘটছে না। বর্তমানে দেশের শহরাঞ্চলের সর্বত্র সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের ধরতে তৎপর হলে অনায়াসেই এর লাঘব সম্ভব।

কোভিড-১৯ পরবর্তী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে আগমন ও প্রস্থানের যাত্রীদের গ্রহণ ও বিদায়ের জন্য আসা ব্যক্তিদের লাউঞ্জে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে একজন ব্যক্তি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ৩০০ টাকা প্রদান করে লাউঞ্জে প্রবেশ করতে পারত। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। সাধারণ যাত্রীদের আগমন ও প্রস্থানের সময় তাদের গ্রহণ ও বিদায়ের জন্য আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার যখন বারিত এমন সময় ভিআইপি যাত্রীদের আগমন ও প্রস্থানে তাদের গ্রহণ ও বিদায়ের জন্য আসা ব্যক্তিদের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার অবারিত।

পৃথিবীর সব উন্নত দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। উন্নত দেশে ভিআইপি লাউঞ্জের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি সংস্থার উপর ন্যস্ত। এসব দেশে ভিআইপি বা ভিআইপি নন অথবা সরকারি বেসরকারি যেকোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের বিনিময়ে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে এসব দেশের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্বাহসহ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ঘটে। উন্নত দেশের তুলনায় সীমিত সামর্থ্যরে আমাদের দেশে কোনো প্রকার অর্থ প্রদান ব্যতিরেকে ভিআইপিদের জন্য আলাদা লাউঞ্জের ব্যবস্থাপনা নীতিনৈতিকতা, মূল্যবোধ ও আইনের দৃষ্টিতে সমতার পরিপন্থী।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশী-বিদেশী উভয় ধরনের যাত্রীরা ব্যবহার করেন। দেশী-বিদেশী সাধারণ যাত্রী ও পর্যটকদের এ বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির বিষয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা, সুযোগ সুবিধা ও সেবার মান নিয়ে যে অসন্তোষ তা অবসানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বরং ক্রমে এর নিম্নমুখিতার কারণে আন্তর্জাতিক নামের যে হানি ঘটে চলছে এর উত্তরণ নিয়ে দেশের সচেতন মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

Exit mobile version