- ২৪ ডেস্ক
রাত পোহালেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এক নতুন বাস্তবতায় উৎসবমুখর ও উত্তেজনাময় পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। তাদের প্রত্যাশা, এবারের ডাকসু শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও ন্যায্য দাবি পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক নিরসনেও ভূমিকা রাখবে।
সোমবার রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৩৪ ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথগুলো (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর ও নীলক্ষেত) সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সময়ে শুধু বৈধ পরিচয়পত্রধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত সাংবাদিকেরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
এবারের নির্বাচনে ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিন বসানোর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে এটিই প্রথম। এই স্ক্রিনে ভোট গণনা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনে স্বচ্ছতা দেখানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৬৩৯ জন, যার মধ্যে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন নারী। ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ৬২ জন নারী। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদের ৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে নারী মাত্র ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদের ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ১ জন।
এবারের নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদের জনপ্রিয় প্রার্থীদের অনেকেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজীর হোসেন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরাই ডাকসুতে নেতৃত্ব দেবেন।’ আরেক শিক্ষার্থী রেজাউল করিমের মতে, ‘জুলাই আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে এসে তৎকালীন সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছিলেন এবারের ডাকসুর প্রার্থীরা।’
শিক্ষার্থীদের ভোটদানের সুবিধার্থে মোট আটটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো— ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, ভূতত্ত্ব বিভাগ, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং কার্জন হল। এই কেন্দ্রগুলোতে যথাক্রমে ৫৬৬৫, ৪০৯৬, ৪৪৪৩, ৬১৫৫, ৪৮৩০, ৪৭৫৫, ৪৮৫৩ এবং ৫০৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা করে ১০ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনে আরও নয়জন রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আমানউল্লাহ আমান— সবাই ডাকসু নির্বাচনকে ‘দেশের দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিয়মিত আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাদের মতে, জাতীয় পর্যায়ে তরুণ ও মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।