Site icon The Bangladesh Chronicle

নতুন আইনে দলিল যার, জমি তার

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন

প্রতীকী ছবিআমি একজন কর্মজীবী নারী। জানার বিষয় ছিল, ভাড়াটে কি জমি দখল করে নিতে পারে? আমাদের বাড়িতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ভাড়া থাকেন। তাঁকে এ মুহূর্তে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। উল্লেখ্য, বাড়ির মালিক আমার মা। জমি ও বাড়িসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র আমাদের কাছেই আছে।

নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

আপনার মা জমির মালিক এবং তাঁর কাছে জমি ও বাড়িসংক্রান্ত সব কাগজ আছে। এটা আপনি বলেছেন। কিন্তু আপনার মা কি ওই বাড়িতেই থাকেন বা তাঁর দখলে ওই বাড়ি আছে কি না, সেটি বলেননি। ভাড়াটে কত দিন ধরে ভাড়া থাকেন, তা-ও বলেননি। যদি ভাড়াটে কোনো বাড়িতে ১২ বছরের বেশি সময় থাকেন, মালিক সেই বাড়ির দখল না রাখেন এবং ওই বাড়ির কোনো দেখভালও না করেন, তাহলে যাঁকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, তিনি সেই বাড়ি দখলের চেষ্টা করতে পারেন। বিদ্যমান দখলিস্বত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পদ ১২ বছর নিজের দখলে রাখতে পারলেই তার মালিকানা দাবি করা যায়। কিন্তু আইনটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, জমির মালিকানা নির্ধারিত হবে দলিলের ভিত্তিতে; অর্থাৎ যাঁর নামে দলিল থাকবে, তিনিই হবেন ওই ভূমির মালিক। নতুন ভূমি আইনে দখলের মাধ্যমে মালিকানার সুযোগ থাকছে না। জমি ও কাগজ যাঁর, মালিকানাস্বত্বও তাঁর। কাজেই আপনার মায়ের জমি কেউ দখল করতে পারবে না। নিশ্চিন্ত থাকুন।

এবার আসি, আপনি যে ভয় পাচ্ছেন, ভাড়াটে প্রভাবশালী বিধায় তাঁকে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এ প্রসঙ্গে। আইন অনুযায়ী, এ দেশে কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কাজেই আপনার মা তাঁর ভাড়াটেকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জানা দরকার ছিল যে ভাড়া দেওয়ার সময় আপনার মা কি কোনো লিখিত চুক্তি করেছিলেন? আপনার প্রশ্নে তার কোনো উল্লেখ নেই। যদি লিখিত চুক্তি থেকে থাকে, তাহলে আপনার মা সেই অনুযায়ী তাঁর ভাড়াটেকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে পারেন।

আইন অনুযায়ী বাড়ির মালিক ও ভাড়াটের মধ্যে একটি চুক্তিনামা সই করতে হবে। যদিও এই চুক্তিনামা সইয়ের বিষয়টি অধিকাংশই এড়িয়ে চলেন। চুক্তিনামায় ভাড়ার মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে। বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ইত্যাদি কে পরিশোধ করবেন, তা স্পষ্ট উল্লেখ করা থাকবে। জামানত থাকলে তা কবে ফেরত দেওয়া হবে, ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে কাটা হবে কি না, এসবও পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকবে। এসব চুক্তির লিখিত দলিল হিসেবে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে।

আপনার মা তাঁর নিজ প্রয়োজনে ভাড়াটেকে চুক্তি অনুযায়ী ১, ২ বা ৩ মাস যা-ই থাকুক, সেই সময়ের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে পারেন। লিখিত চুক্তি যদি না থাকে, তাহলে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ীও নোটিশ দিতে পারেন।

বাড়িওয়ালা হিসেবে আপনার মা তাঁর নিজের প্রয়োজন ছাড়াও বেশ কিছু কারণে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে পারেন। তা হলো, ভাড়ার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলে, আপনার অনুমতি ছাড়া বাড়ির নকশা পরিবর্তন করলে কিংবা ভাড়াটে-স্বত্ব অন্য লোকের কাছে হস্তান্তর করলে অথবা সাবলেট দিলে, ভাড়া বাকি থাকলে, কোনো উৎপাত বা ক্ষতিকর কাজ করলে।

মেয়াদ শেষে বা নোটিশ পাওয়ার পর ভাড়াটে যদি বাড়ির দখল না ছাড়েন, তাহলে আপনার মাকে অবশ্যই আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এ সম্পর্কে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৬ ধারায় বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটের ব্যর্থতাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ভাড়াটে যদি বাড়ির দখল না ছাড়েন, তাহলে বাড়িওয়ালার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাঁকে ভাড়ার ১০ গুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করবেন। ভাড়াটের কোনো অধিকার নেই মেয়াদ শেষে বা নোটিশপ্রাপ্তির পর বাড়ি দখল করে রাখার, তা তিনি যতই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হোন না কেন।

মেয়াদ শেষে দখল বুঝিয়ে না দিলে বাড়িওয়ালা হিসেবে আপনার মায়ের উচিত হবে কালবিলম্ব না করে ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে অভিযোগ করা। ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রক তদন্তক্রমে উল্লিখিত দণ্ডে ভাড়াটেকে দণ্ডিত করবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন
ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Exit mobile version