ধ্বংসের পথে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়: স্থায়ী ক্যাম্পাস ছেড়ে গুলশানে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে চলছে অপতৎপরতা

 আমার দেশ
৩০ মে ২০২৩

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস গুলশানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস গুলশানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টিবোর্ড দখলের পর গুলশানে ট্রাষ্টের জমি দখল চুড়ান্ত করতে যাচ্ছে আওয়ামী মাফিয়া সরকারের অনুগত ট্রাস্টিবোর্ড। শীঘ্রই এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস গুলশানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শর্ত মোতাবেক আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে গুলশানে অস্থায়ী কম্পাসে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। গুলশানে ট্রাষ্টের বিরোধপূর্ণ জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস আবার স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র লিপ্ত দখলদার ট্রাস্টিবোর্ড। মূলত গুলশানের জমির প্রতি এই বোর্ডের লোভই মূল্য স্থায়ী ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পেছনে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি অভ্যন্তরীণ মিটিং এ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, আগামী ১ জুন ২০২৩ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের বোর্ড মিটিং রয়েছে। এই মিটিংয়ের পর আশুলিয়া ক্যাম্পাস গুলশানে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। এই ঘোষণায় ছাত্র-ছাত্রীরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এই খবর জানাজানি হওয়ার পর আশুলিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, কেন আমরা গুলশানে যাবো? তাছাড়া গুলশানে নেই কোন খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, ল্যাবরেটরি সুবিধার কথা সেখানে ভাবাই যায় না। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, গুলশান ক্যাম্পাস নিয়ে এখন মামলা চলমান। ক্যাম্পাসের জমিতে কোর্টের নিষেধাজ্ঞা বিরাজমান। এর কোন আইনগত বৈধতা নেই। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষের আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস ছেড়ে গুলশানে স্থানান্তরের চিন্তা একটি হঠকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে অভিভাবকরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস ছেড়ে গুলশানে যাওয়ার প্রশ্নে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয় মানারাতের আশুলিয়া ক্যাম্পাসের। তৎকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল আশুলিয়া ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন এবং তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার ভিত্তিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে এখানেই ভর্তি হয় হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যাচ্ছে মানারাতের আশুলিয়া ক্যাম্পাস স্থানান্তর করে গুলশানে নেয়া হবে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গত ২৯ মে আশুলিয়া ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ ছাত্ররা। তাদের দাবী তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস জেনেই আশুলিয়ায় ভর্তি হয়েছে, আশুলিয়াতেই তারা শিক্ষা জীবন শেষ করতে চায়।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই বিদ্যমান ট্রাস্টিবোর্ড বিলুপ্ত করে নতুন ট্রাস্টিবোর্ড গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন এই পদক্ষেপকে ট্রাস্টিবোর্ড দখল হিসাবে চিহ্নিত করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছিল ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ তোড়াই কেয়ার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত: ট্রাস্টিবোর্ড দখল করে আওয়ামীকরণ করা হয়েছিল সেদিন। এরপর থেকেই শুরু হয় গুলশানে ট্রাষ্টের জমি দখলের চক্রান্ত।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পূর্ববর্তী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ কখনো উত্থাপন এবং অনিয়মের অভিযোগে কখনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই সেদিন বিলুপ্ত করা হয়েছিল সেই বোর্ড। কারণ দর্শানোর কোন নোটিশ ছাড়াই বিদ্যমান ট্রাস্টি বোর্ডকে বাতিল করে পুরোপুরি আওয়ামীলীগের লোকজন দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের মত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছিল।

আমার দেশ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ঘটনার পেছনে সরকারের উচ্চ মহলের সাথে যোগসাজশ রক্ষার মাধ্যমে ভেতর থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছে ভিসি নজরুল ইসলাম এবং তার ডানহাত বলে পরিচিত ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের হেড ওবায়দুল্লাহ। ওবায়দুল্লাহ কুষ্টিয়ার ইসলামি ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন শিবিরের সাথী ছিল। সাবেক এই শিবির নেতা আওয়ামী ট্রাস্টির মূল কন্টাক্ট পয়েন্ট এবং সমস্ত সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক বলে অভ্যন্তরিণভাবে আলোচিত এবং সমালোচিত। অর্থ, জমি ও ক্ষমতার লোভে শিবির থেকে আওয়ামীলীগ বনে যাওয়া ওবায়দুল্লাহ ও বর্তমান ভিসি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সহায়তায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ পরিপন্থী নানা অশুভ অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের এই অপতৎপরতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের পায়তারা করা হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ভিসি নজরুল ইসলাম এবং তাঁর ডানহাত হিসাবে পরিচিত ওবায়দুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। কিন্তু তাদের ফোনে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেননি।