চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে ব্যবধানটা আরও বড়। ওই প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে। ভিত্তি বছর ধরা হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে। বিবিএসের জিডিপি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সংস্থার ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার শর্ত পরিপালনে এ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে উৎপাদন পদ্ধতিতে ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ শুরু করে বিবিএস। সে ধারায় দ্বিতীয়বারের মতো এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে জিডিপির এ ধরনের প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তবে সাধারণত কোনো প্রান্তিকের জিডিপির প্রথম প্রাক্কলনের সময় হালনাগাদ সব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। এতে আগের প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ফলে পরে তা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া পুরো অর্থবছরের জিডিপির হিসাব করার ক্ষেত্রে উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যয় পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ সময় কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা প্রথম প্রান্তিকে ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে ছিল শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। বিবিএসের আগের তিন অর্থবছরের উপাত্ত বিশ্লষণে দেখা যায়, সমাপ্ত প্রান্তিকের মতো অন্য কোনো প্রান্তিকে কৃষিতে এত বেশি হারে প্রবৃদ্ধি হতে দেখা যায়নি।
কৃষিতে এমন সাফল্য থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা নিম্নমুখী। গত তিন অর্থবছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরেই দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ দুই খাতের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, শিল্প খাতে গত প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ; যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি, ১০ শতাংশ। বিবিএসের পুরোনো উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
অবশ্য সেবা খাতে প্রান্তিকভিত্তিক প্রবৃদ্ধিতে তফাতটা তুলনামূলক কম। বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ; যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেবা খাত বলতে সাধারণত খুচরা বিক্রি, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মকাণ্ড, কম্পিউটার সেবা, বিনোদন, প্রচারমাধ্যম, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ ইত্যাদিকে বোঝানো হয়।
এডিবির পূর্বাভাস
এদিকে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে আগামী অর্থবছরে তা বেশ বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৪ প্রতিবেদনে এ প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রপ্তানি খাতের বড় অবদান থাকবে। বিশ্ববাজারে চাহিদা কম হওয়া সত্ত্বেও ডলার সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা স্থানীয় সুতা ও কাপড় ব্যবহার করায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। সবচেয়ে বেশি হতে পারে ভারতে, ৭ শতাংশ। সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সমকাল