Site icon The Bangladesh Chronicle

দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ: টিআইবি

mzamin
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ১১৬ জন এবং প্রতি চারজন প্রার্থীর একজন ঋণগ্রস্ত। এ ছাড়া মোট প্রার্থীর মধ্যে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রার্থী বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। আর চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশই ব্যবসায়ী। গতকাল ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে টিআইবি।

প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে উপজেলা পরিষদ ভোটে অনির্বাচিত প্রার্থীদের চেয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আয় ও সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যারা পদে ছিলেন এমন প্রার্থীদের গত দশ বছরের হিসাব তুলনা করলে দেখা যায়, পদে থাকা প্রার্থীদের আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে যথাক্রমে ৫৪০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও ২১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পদে না থাকাদের এক্ষেত্রে আয় ৫৬ শতাংশ বা ৪৭ শতাংশ বাড়লেও, সম্পদ কমেছে ৪৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট চলমান। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশই ব্যবসায়ী। ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৯ দশমিক ২৬ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫১ দশমিক ৬৩ শতাংশই নিজেকে গৃহিণী হিসেবে উল্লেখ করেছেন অথবা গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। যদিও গৃহিণী বা গৃহস্থালিকে পেশা হিসেবে দেখানো প্রার্থীদের ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে।

 

টিআইবি জানায়, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশ প্রার্থীদের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, যেখানে অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ৫৩ শতাংশ। একইভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশের আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার উপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাছাড়া, সার্বিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের মধ্যে ১১৬ জনের ১ কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে। কোটিপতির সংখ্যা আগের নির্বাচনের তুলনায় হয়েছে তিনগুণের বেশি।
টিআইবি’র তথ্য বলছে, মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিলেও দ্বিতীয় ধাপে তাদের স্বজনদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। দ্বিতীয় ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের ১৭ জন স্বজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপে ১৩ জন স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরে একজন প্রার্থীর আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ, অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। দশ বছরে একজন প্রার্থীর আয় বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৩৬ শতাংশ। পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। সংসদ নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্যদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, সেখানে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার শতাংশের বেশি। তাছাড়া, আইনি সীমা বা ১০০ বিঘা বা ৩৩ একরের বেশি জমি আছে ৪ জন প্রার্থীর।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় পর্যায়ের মতোই ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য প্রায় একচ্ছত্র। একইভাবে একদলীয় আধিপত্যের বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে, যেমন বাড়ছে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবারতন্ত্র। সব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতাও স্পষ্ট উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা আগে থেকেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন তাদের আয়-সম্পদ বৃদ্ধি যারা জনপ্রতিনিধি ছিলেন না তাদের থেকে বহুগুণ বেশি। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচিত হওয়ার মূল আগ্রহের জায়গা অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের কল্যাণ থেকে সরে গিয়ে নিজের সম্পদ বৃদ্ধিতে স্থির হয়েছে। তাছাড়া অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির যে চিত্র হলফনামার তথ্য থেকে দেখা গেছে, সেগুলো তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং সম্পদ অর্জন বা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ সে দায়িত্ব পালনে কোনো আগ্রহ দেখায় না। অন্যদিকে হলফনামায় যে তথ্য দেয়া হয়, তা কতোটুকু পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তাও খতিয়ে দেখা হয় না।

নির্বাচনে জনস্বার্থের পাশাপাশি দলীয় আদর্শ কিংবা দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়গুলো উপেক্ষিত উল্লেখ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুই ধাপেই আমরা দেখলাম বড় দুই রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই দলীয় নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয়টি অনুপস্থিত। তদুপরি, বৃহৎ দল দুটি দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারছে না। কারণ, স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে সম্পদ অর্জনের লাইসেন্স পাওয়াই এখানে মূল উদ্দেশ্য। সার্বিকভাবে, এই নির্বাচনের লড়াই একদিকে যেমন অসুস্থ, অগণতান্ত্রিক, আত্মকেন্দ্রিক। অন্যদিকে জনগণ বা জনকল্যাণের সঙ্গে এর সম্পর্ক ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সহ-সমন্বয়ক ইকরামুল হক ইভান। টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা দলের সদস্য ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সহ-সমন্বয়ক রিফাত রহমান ও কে. এম. রফিকুল আলম।

Manbzamin

Exit mobile version