সুইডেন প্রবাসী একজন বাংলাদেশী মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন যে তার লেখালেখির কারণে বাংলাদেশে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শন’ করেছেন।
ফেসবুকে এক পোস্টে তাসনিম খলিল বলেছেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর তিনজন সদস্য বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে তাকে নানা বিষয়ে বিশেষ করে তার লেখালেখির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
“প্রথমে তারা আমার মায়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং পরে সাংবাদিক হিসেবে আমার কাজকর্ম সম্পর্কেও জানতে চান। তারা তাকে বলেন আমি যা করছি সেটা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে,” লিখেছেন তিনি।
তাসনিম খলিল বাংলাদেশ শেখ হাসিনা সরকারের একজন সমালোচক। নেত্রনিউজ নামের একটি অনুসন্ধানী সংবাদ ওয়েবসাইটের সম্পাদক তিনি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য ও প্রস্তুতির কথা তুলে ধরা হচ্ছে সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তিনি।
আইএসপিআর কিছু জানে না
এবিষয়ে আন্ত-বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর আইএসপিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান যে এ সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই।
আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তাসনিম খলিলের ফেসবুক স্ট্যাটাস কিম্বা তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই।”
আরো পড়তে পারেন:
‘গুজব’ ঠেকাতে গ্রেফতার বন্ধ করুন – হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
করোনাভাইরাস: ‘গুজব’ ঠেকাতে টিভি মনিটরিংয়ের এক সিদ্ধান্ত বাতিল
করোনাভাইরাস: ছড়িয়ে পড়ছে গুজব, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
মা’র সাথে টেলিফোনে কথা
তাসনিম খলিল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সিলেট শহরের একটি বাড়িতে তার মা নাজনীন খলিল ভাড়া থাকেন। বয়স্ক হওয়ার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি আইসোলেশনে আছেন।
তিনি জানান, আজকের ঘটনার পরপরই তার মা তাকে টেলিফোন করে সবকিছু জানিয়েছেন।
“আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে বাড়িতে তিনজন লোক আসে। তারা নিজেদেরকে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয়। আমার মা বার বার তাদের কাছে তারা কোন সংস্থার লোক সেটা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা এর কোন উত্তর দেননি।”
তিনি বলেন, “তাদের একজন পিপিই পরে এসেছিলেন। আরেক জনের পরনে ছিল টি-শার্ট। অন্যজন ইউনিফর্ম পরে এসেছিলেন কিন্তু আমার মা বুঝতে পারেন নি যে সেটা কোন সংস্থার ইউনিফর্ম।”
সৌজন্যমূলক আচরণ
তাসনিম খলিল বলেন, তার মা তাদেরকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেন নি। তিনি তাদেরকে বলেছেন যে তিনি আইসোলেশনে আছেন এবং যা বলার সেটা দরজার বাইরে থেকেই বলতে হবে।
“প্রথমে তারা আমার মায়ের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চান এবং এর পর তারা আমার ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করেন। তারা আমার মাকে বলেন, আপনার ছেলে তাসনিম খলিল, ওনারে বুঝিয়ে বলেন উনি দেশবিরোধী লেখালেখি করছে। তাকে আপনি বুঝিয়ে বলেন। আপনি তো মা।”
“তখন আমার মা তাদেরকে বলেন যে আমার ছেলে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ, তার নিজের বাচ্চা কাচ্চা আছে। ও যা লিখছে তার দায়িত্ব তো আমি নেব না। তখন তারা বলে যে আমি মিথ্যা কথা লিখছি। তিনি তখন তাদের বলেন যে সেবিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না কারণ একেক জিনিসের একেকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।”
তাসনিম খলিল বলেন, তার মা তখন তাদেরকে বলেছেন যে এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকার তার সন্তানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।
তিনি জানান যে তারা তার মায়ের সাথে অসৌজন্যমূলক কোন আচরণ করেন নি। তবে যাওয়ার আগে বলে গেছেন যে অন্য কোন সংস্থা থেকে লোকজন এলে তারা আরো খারাপ আচরণও করতে পারে।
তথ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
এই অভিযোগ এমন সময়ে এলো যেদিন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ‘দেশ-বিদেশ যেখান থেকেই হোক, গুজব ছড়ালে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, কেউ করোনাভাইরাস নিয়ে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি বা গুজব তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে’কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
বৃহস্পতিবার এক বৈঠক শেষে মি. মাহমুদ বলেন, বিদেশ থেকে এধরনের তৎপরতা চালালে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
“দেশে যখনই কোনো দুর্যোগময় পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে ভয়ার্ত করার অপচেষ্টা চালায় এবং একইসাথে একটি মহল এধরনের গুজব তৈরি করে সরকারকেও বেকায়দা ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে,” বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “বিদেশে এমন বাংলাদেশি আছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা গুজব সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
“তারা হয়তো মনে করছেন তারা বিদেশে আছেন বিধায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু তারা বাংলাদেশের নাগরিক সুতরাং বাংলাদেশের নাগরিক যেখান থেকেই অপকর্ম করুন না কেন, সরকার আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং তা করবে।”
আরো পড়তে পারেন:
করোনাভাইরাস: গুরুতর রোগীর চিকিৎসায় আইসিইউ সুবিধা কি পর্যাপ্ত?
বাংলাদেশে চব্বিশ ঘণ্টায় শতাধিক রোগী শনাক্ত