অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। সরকারের পদলেহনকারী কয়েক দল ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সরকার দেশকে সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আবার সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করে ’১৪ ও ’১৮ মতো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু জনগণ সেটা হতে দিবে না।
সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল কোনো মতামত দেয়নি। আমরা পরিষ্কার বলেছি, এই পরিস্থিতিতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনা চায় তাহলে বিএনপি সেই আলোচনায় অংশ নিতে রাজি আছে।
বিএনপি নেতা এ্যানীকে বাসার দরজা ভেঙে ডাকাতের মতো পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এ্যানীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। তার কোনো ক্ষতি হলে সরকার জনরোষের স্বীকার হবে। তাই অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে । যাদের কাজ হলো বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও গায়েবী মামলার তালিকা করে নির্দিষ্ট কিছু মামলা দ্রুত বিচার করে সাজা দেয়ার জন্য আদালত সমূহকে নির্দেশ দেয়া। কাজটা শুরু হয়েছে এবং গতকালই ১৫ জন নেতাকে ৪ বছর করে সাজা দেয়া হয়েছে।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি দৃঢ়ভাবে মনে করে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনের নামে সরকার যা করছে তা বেআইনি সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। অবিলম্বে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য জোর দাবী জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি এ ব্যাপারে অধিক তৎপর। স্বাভাবিক দলীয় শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, এমনকি গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আগের কোনো গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্ত্বেও জামিন দেয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন প্রাপ্তরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলেই জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে কারাগারে বন্দিদের উপর নিপীড়ন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি কক্ষে দ্বিগুন-তিনগুন বন্দিকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। পনের দিনের আগে তো নয়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পনের দিন পরেও বন্দিদের সাথে আত্মীয়-স্বজন দেখা করতে পারেন না। দর্শণার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার নিত্যই ঘটছে। খাবার অতি নিম্ন মানের এবং রোগে চিকিৎসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অর্থাৎ সব মিলিয়ে নেতা-কর্মীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন যেন একটি পাপকর্ম তেমনটা বোঝানোর পাশাপশি যারা বাইরে আছে তাদেরকে সন্ত্রস্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটি নির্যাতন, নিপীড়নের এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে আইনানুগ মানবিক আচরণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানাচেছ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার প্রায় ৭শত বিরোধী নেতা-কর্মীকে গুম, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে খুন, প্রায় ৫০ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার মিথ্যা ও গায়েবী মামলা করে নিপীড়ন ও জুলুমের যে নিকৃষ্ট রেকর্ড স্থাপন করেছে তা বিশ্বে নজিরবিহীন। এর বিপরীতে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার নজির স্থাপন করেছে আমাদের দেশের বীর জনতা। তাঁরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে এবং স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যও জীবন দিয়েছে ও দিচ্ছে। কোনো জীবন দানই বৃথা যায় না। শহীদের রক্তের উপরই স্থাপিত হয় বিজয়ের পতাকা। আমাদের অনেক সাথী শহীদ হয়েছেন। এবার তাদের সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা নিশ্চিত করার লড়াইয়ে দেশের সংগ্রামী জনগণ অবশ্যই বিজয়ী হবে।
বিএনপি সেই বিজয়ের লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।