২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে অঘোষিতভাবে ফ্যাসিবাদ অব্যাহত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা দেশকে অঘোষিতভাবে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, যা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এ সময়ে আওয়ামী লীগ কথিত জঙ্গিবাদকে বিরোধী দল দমনের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। এটিই ছিল তাদের অপরাজনীতির মূলমন্ত্র।
শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে গ্র্যান্ড প্রিন্স রেস্টুরেন্টে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির এসব কথা বলেন।
এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারকে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, এই জরুরি সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে অবৈধভাবে দুই বছর পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করেছিল। এবং তারা নিজেরাই ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। তাদের এসব দুর্নীতি-অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতেই আওয়ামী বাকশালিদের পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতায় আনা হয়।
জামায়াতের এই নেতা দাবি করেন, এই ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় এসে দেশপ্রেমী শক্তিকে বিশেষভাবে টার্গেট করে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা কথিত বিচারের নামে দেশবরেণ্য জাতীয় নেতাদের হত্যা করে। তারা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে এক মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তারা কথিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, জমি জবরদখল, টেন্ডারবাজিসহ দেশকে অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে।
জঙ্গিবাদকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ারে পরিণত করার অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সঙ্গে থাকলে সঙ্গী আর না থাকলে জঙ্গি’ এটিই ছিল তাদের অপরাজনীতির মূলমন্ত্র। স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকার স্লোগান ছিল তাদের প্রতিপক্ষ দমনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এসব অপপ্রচার নতুন প্রজন্মের কাছে হালে পানি পায়নি বরং তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করে বলেছিল, ‘তুমি কে, আমি কে; রাজাকার, রাজাকার’। তিনি ছাত্র আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করার জন্য সরকার হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। তারা শত শত শিক্ষার্থীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অন্ধত্ব বরণ করেছেন। তারা আয়নাঘর বানিয়ে মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে। তারা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আজমী ও ব্যারিস্টার আরমানের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের শত শত প্রাণের বিনিময়ে আমাদের জুলুমের অবসান হয়েছে।’ তিনি অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
জামায়াত প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না জানিয়ে শফিকুর রহমান দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও ওপর প্রতিশোধ নেবেন না। তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের দেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু ইস্যু হচ্ছে সমাজকে শোষণ করার অন্যতম হাতিয়ার। আমরা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রনির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশি। তাই কোনোভাবেই সম্প্রীতি নষ্ট করা চলবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। আর কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেওয়া যাবে না।’
জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, কাফরুল থানা বিএনপির আহবায়ক আকরাম বাবুল, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি তপনিমদ্রক নারায়ণ হোড় ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবচক্রবর্তী, মিরপুর-১৩ নম্বর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফয়সাল জালালী, জামিয়া মুহাম্মাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা লতিফ ফারুকী, ঢাকা মহানগর ওলামা মাশায়েখ আইম্মাহ পরিষদের সেক্রেটারি মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ আনছারী, দক্ষিণ কাফরুল জামে মাসজিদের খতিব মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের কো-চেয়ারম্যান মুফতি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সিনিয়র পুরোহিত রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী প্রমুখ।
prothom alo