Site icon The Bangladesh Chronicle

দুর্বার গতিতে ছুটছে পেঁয়াজ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৯ মে ২০২৩, ১০:৪৯ এএম

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এহসানুল বারি। শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল সকাল বাজার করতে গেছেন মহাখালীর বাজারে। বাজারে যা কিনেছেন সবই কিনেছেন বাড়তি দামে, তবে এর মধ্যেও পেঁয়াজ তাকে অবাক করেছে।

এহসানুল বলছেন, ১৫ দিন আগেও তিনি ৫৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন, সেই পেঁয়াজ আজ তিনি কিনলেন ৮০ টাকায়।

তিনি প্রশ্ন রাখেন- বাজার মনিটরিংয়ের যাদের দায়িত্ব তারা আসলে কী করছে?

এক মাস আগে অর্থাৎ ঈদের আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। গত ১৫ দিন আগেও দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। অথচ আজ (শুক্রবার) রাজধানীর খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্চ থেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে, ফলে দাম বেড়েছে। উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত মাস পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ মাসে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজিতে ৮০ টাকায় ঠেকেছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে,  গতকাল বৃহস্পতিবারও খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আজও একই দাম চলছে বাজারে।

টিসিবির সহকারী কার্যনির্বাহী (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই এই দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। যা বর্তমানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির বাজার পর্যালোচনার তথ্য মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২১.৪৩ শতাংশ। গত বছর এই সময় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৬.১৪ শতাংশ।

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে দীর্ঘ দিন পেঁয়াজ, আদা, রসুন আর আলুর ব্যবসা করেন বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। মাল কিনতে গেলে বড় ব্যবসায়ীরা বলে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, তাই দাম বাড়তি। আমদানি শুরু হলে আবার পেঁয়াজের দাম কমবে। ততদিন পর্যন্ত বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পাবনা থেকে অনেক সময় সরাসরি পেঁয়াজ এনে রাজধানীর বাজারে বিক্রি করি। এখন সেখানে বাজার চলে ২৭০০ টাকা মন। নিয়ে আসার খরচ, বাড়তি দাম সব মিলিয়ে এটা এখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম বলেন, যা শুনেছি তাতে দেশে এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁজারের মজুত রয়েছে। সরবরাহও আছে, তবে অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের কাঁধে এই বাড়তি দামের জুলুম পড়েছে। আসলে যারা বাজার মনিটরিং করেন তাদের ব্যাপকভাবে তৎপর হয়ে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আজ যেমন ৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনলাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কি এতটা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে খেতে পারবে? সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

রাজধানীর মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকার মুদির দোকানী সুমন আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনা পড়ছে, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আজ বাজার চলছে ৮০ টাকায়। যখন কেনা দাম কম পড়বে তখন আমরাও কম দামে বিক্রি করব। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পর থেকে আমাদের মতো ছোট দোকানেও পেঁয়াজ বিক্রি কমেছে। আগে যদি কোনো ক্রেতা ২ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, এখন তারা এক কেজি করে কিনছেন। তাই আমরাও তুলনামূলক কম পেঁয়াজ আনছি বাজার থেকে।

Exit mobile version