Site icon The Bangladesh Chronicle

দুর্নীতি ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র ভাবে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্র সচিব

দু

র্নীতি ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র ভাবে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্র সচিব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় ১১ বাংলাদেশির ‘শর্ট লিস্ট’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।

<div class="paragraphs"><p>পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।</p></div>

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2023, 12:33 PM
Updated : 7 August 2023, 12:33 PM

দুর্নীতিবাজদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা-ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের থাকতে পারে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

সোমবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যুক্তরাষ্ট্র্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি-দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউর সঙ্গে বৈঠকের পর এমন কথা বলেন তিনি।

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, নেফিউ এমন কথা বলেছেন বলে জানান মাসুদ।

ঢাকা সফরে এসে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, টিআইবির সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের মধ্যে রিচার্ড নেফিউ সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা নীতি বিষয়ক মুখ্য উপ-সমন্বয়কারী ছিলেন নেফিউ। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে দেন-দরবারের সময় প্রধান নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি।

ইরানের উপর বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালনকারীদের একজন ছিলেন নেফিউ। ‘দি আর্ট অব স্যাকশনস’ নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি।

দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশের ১১ জন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে, এমন একটি খবর চাউর হওয়ার মধ্যে সোমবারের এই বৈঠক হয়।

এনিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয় নাই।

“তবে, তারা বলেছে যে, সে যেহেতু নিজেও স্যাংশনের কর্মকর্তা ছিল এক সময়, সুতরাং সে বলেছে যে, কোনো ব্যক্তিবিশেষের কথা বলে নাই, তবে বলেছে যে, স্যাংশন অ্যাজ এ টুল এগেইনস্ট করাপ্ট পিপল। এটার চিন্তা-ভাবনা আছে হয়ত।”

১১ জন বাংলাদেশির ‘শর্ট লিস্ট’ করছে, এই রকম কোনো কিছু আলোচনায় এসেছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “না।”

“কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে বা কোনো দেশের বিরুদ্ধে, এগুলো নিয়ে আলাপ হয়নি।”

বড় বড় প্রকল্প অর্থায়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে দুর্নীতিকেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা ওইসিডি নেয়।

মাসুদ বলেন, “ওইসিডি থেকে ’ব্লু ডট’ নামে প্রজেক্ট আছে। ভবিষ্যতে বড় বড় অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা, পরিবেশগত দিক ও সততার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

“সুতরাং আগামীতে হয়ত, এ ধরনের একটি পরিস্থিতিও আসবে। সুতরাং আমাদেরও সেই রকম প্রস্তুতি থাকা উচিৎ।”

অর্থ পাচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, যে সমস্ত ব্যাংক বা সে সমস্ত, অনেক সময় ছোট ছোট দেশ আছে, দ্বীপরাষ্ট্র সেখানে অনেক সহজে টাকা পাচারের একটি বিষয় আছে। আমরা হুন্ডি বা হাওয়ালা সিস্টেম, সেটার কথা বলেছি। সুতরাং এগুলাতে আরও ট্রান্সপারেন্সি বাড়ানো দরকার, আরও জবাবদিহিতা থাকা দরকার।”

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ‘পাচার হওয়া’ অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ফেরত আনাটা পরের বিষয়। প্রথমত কোন রুটে এগুলো যাচ্ছে বা এগুলো বন্ধ করা .. এগুলো সব অবৈধ অর্থ নাও হতে পারে।”

নিজের কথার ব্যাখ্যায় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “কানাডার কথা আপনারা প্রায়ই বলেন, আমরা জানি মিডল ইস্টে কিন্তু অনেক বাংলাদেশি আছে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, তারা কিন্তু অনেক কষ্ট করে পয়সা উপার্জন করে তারপরে কানাডায় গেছে। সুতরাং সেটাও কিন্তু এটার মধ্যে আছে।

“তারপরে অনেকে ধরেন, ব্যবসা করে, তাদের রপ্তানির আয়ের একটা অংশ যদি ওখানে থাকে, সেটাও কতখানি অনিয়ম বা বেআইনি, আমি জানি না। বাংলাদেশে অনেক তাদের বাবা, মা বা দাদা জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট হয়ত বিক্রি করে, সেই টাকাটা হয়ত নিয়ে গেছে, এটার উৎসটা অবৈধ উপায়ে উপার্জন বলা ঠিক হবে না। এটা বৈধভাবে পেয়েছেন, কিন্তু সেটা কীভাবে নেওয়া হয়েছে, আইনসঙ্গতভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, এই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আছে।”

“সব দেশের থেকে সমানভাবে ইয়ে পাই না। ছোট ছোট যে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো আছে, তাদের সাথেও, তারা একটি সিস্টেম তৈরি করে রেখেছে, যাতে এই ফান্ডগুলো যাতে ওখান যেতে পারে।”

আন্তঃরাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সব দেশ থেকে সমানভাবে সাড়া না পাওয়ার কথা বৈঠকে তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে সচিব বলেন, “আমি যেটা তাদেরকে বলেছি, অনেক ক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের যে বিষয়গুলো আছে, বিভিন্ন দেশের সাথে, সেইগুলাতে আমরা কিন্তু সবসময় বিভিন্ন দেশের থেকে আমরা সমান সাড়া পাই না।”

এক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ডের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো দিতে ‘অপারগতা প্রকাশ করেছিল’।

“সুতরাং আমরা চাই যে, সকল দেশই যাতে এই বিষয়টাতে সহযোগিতা করে। এবং যে ব্যাংকিং সিস্টেম আছে, সেখানেও যাতে স্বচ্ছতা থাকে।”

জাতিসংঘেও অবৈধ অর্থের বিষয়ে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা চলছে জানিয়ে বৈশ্বিক সংস্থাটিতে বাংলাদেশের সাবেক এই স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “ইলিসিট বিভিন্ন ধরনের ফান্ড বিভিন্ন জায়গায় পার্ক করা আছে, সেগুলো যাতে তাদের লেজিটিমেট যে জায়গাগুলো সেখানে যাতে ফেরত নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে জাতিসংঘে অনেক দিন ধরে কথাবার্তা চলছে।

“কিন্তু আমরা এখনো সেটার কোনো কনক্রিট ইয়ে আমরা পাই নাই। সুতরাং সকলের সহযোগিতা না পেলে কিন্তু ডিফিকাল্ট হবে।”

বৈশ্বিক বিভিন্ন কনভেনশনের আলোকে বাংলাদেশ কীভাবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।

Exit mobile version