২৫ জুন ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার বেয়াই ফরিদপুরের সম্রাট হয়ে উঠে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠতায় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় অধিকতর তদন্তের চার্জশীট দিয়েছে সিআইডি। এতে মোশারফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, তাঁর ডানহাত হিসাবে পরিচিত ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৪৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই এই চার্জশিটের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
রবিবার (২৫শে জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর পেশকার সাইফুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২২ জুন মামলার তদন্তকারী সিআইডি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ৪৭ জনের বিরুদ্ধে এ অধিকতর চার্জশিট দাখিল করেন।
এর আগে ২০২১ সালের ৩ মার্চ বরকত ও রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি থেকে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আসিকুর রহমান ফারহান, খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।
২০২০ সালের ২৬ জুন অবৈধ উপায়ে দুই হাজার কোটি টাকা আয় ও পাচারের অভিযোগে বরকত ও তার ভাই রুবেলকে প্রধান আসামি করে ঢাকার কাফরুল থানায় মামলা করে সিআইডি। ২০১২ সালের অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন সংশোধনী–২০১৫–এর ৪ (২) ধারায় এ মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন সাজ্জাদ ও ইমতিয়াজ। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন তারা। এসি, নন–এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজারো গাড়ির মালিক হয়েছেন। এ টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন তারা। প্রথম জীবনে এই দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফাইফরমাশ খাটতেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না।
এতে আরও বলা হয়, গত বছরের ১৮ জুন এস এম মিরাজ এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই দুই ভাই অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেছেন।
নেপথ্যে কারা?
১৯৯৬ ও ২০০১-এর নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনের (সদর) আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়ে হেরে যান সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। তাকে পরাজিত করে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ। ২০০৮-এর সমঝোতার নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াত নেতা শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে জিতে যান মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ। ওই বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তাঁর ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে পাস করিয়ে আনেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খান জানান, সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের ভাই মোহতেশাম হোসেনের হাত ধরেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এই দুই ভাই।
ফরিদপুরের ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের বিএডিসির স্টোরকিপার আবদুস সালাম মণ্ডলের দুই ছেলের মধ্যে বরকত এসএসসি আর রুবেল এইচএসসি পাস। রুবেল একটি ছোট চাকরি করলেও বরকত ছিলেন বাবু কসাই নামের এক সন্ত্রাসীর ক্যাডার। এলাকায় এঁরা খোকন রাজাকারের ভাগনে হিসেবে পরিচিত। তাঁদের মামা জাহিদুর রহমান ওরফে খোকন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। ফরিদপুরের নগরকান্দায় মামার টিভি শোরুমে কাজ নেন বরকত। পরে হাইওয়েতে বাস থেকে চাঁদা তোলার কাজ পান। ছোট ভাই রুবেল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কম বেতনে চাকরি নেন।