Site icon The Bangladesh Chronicle

দুই হাজারেরও বেশি পুকুরের ঢাকায় টিকে আছে মাত্র ২৯টি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের রাজধানী ঢাকায় পানির উৎস দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শহরে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ প্রাকৃতিক জলাধার থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে তা ৪-৫ শতাংশেরও এরও কম।

মৎস্য বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ২ হাজার।

বৃহস্পতিবার (০৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত নগর সংলাপে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ১০০টি, তা কমে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯টিতে। গত ৫ বছরে ঢাকায় পুকুর কমেছে ৭১টি।

তিনি বলেন, ঢাকায় জলাশয় কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের কাজ শুরু করা হয়েছে। মান্ডা, জিরনিসহ বেশ কয়েকটি খাল উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জলাশয় রক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে ডিএসসিসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বঙ্গবাজারের স্বরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকায় পুকুর ও পানির উৎস না থাকা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।

তখন এক প্রতিবেদনে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজারেরও বেশি। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ২ হাজার। কিন্তু ঢাকায় এখন পুকুরের সংখ্যা ১০০টিরও কম।

জানা গেছে, যে এক হাজার ৯০০ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার ভরাট হয়ে গেছে, তাতে জমির পরিমাণ ৭০ হাজার হেক্টর।

ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল হারিয়ে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০%-এর নিচে নেমে যাবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় খালের সংখ্যা ৪৭টি। তবে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৫৬টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই মৃতপ্রায়। এর মধ্যে দখল হয়ে যাওয়া ২৬টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। বাকি খালগুলোর অস্তিত্ব তারা এখনো খুঁজে পায়নি। জানা গেছে, খাল দখলদারদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

ঢাকা শহরের যে খালগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে মোট ৭৭টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছে।

কেবল পানির উৎসের জন্য নয়, ঢাকা শহরে বৃষ্টির সময় যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় তা থেকে রক্ষার জন্য খাল, পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধার প্রয়োজন মন্তব্য করে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, আমরা যদি ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভর করে বসে থাকি তাহলে তো চরম সংকটে পড়ব। কারণ পানির স্তর তো নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আমাদের এখানকার যে শিল্প কারখানার ধরন তাতেও প্রচুর পানি প্রয়োজন। কারণ যেসব কারখানায় বর্জ্য বেশি হয়, দূষণ বেশি হয় সেগুলোই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক কেজি জিনিস উৎপাদন করতে ২২০ কেজি পানি লাগে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই সিটিতে যে ৪৭টি খালের হিসাব সরকারই দিচ্ছে, সেই খালগুলো আগে উদ্ধার করা হোক। আর সরকারি অনেক পুকুরও ভরাট হয়েছে। পার্কের অনেক পুকুর নাই। সেগুলো উদ্ধার করা হোক।

শেয়ারনিউজ, ০৪ মে, ২০২৩

Exit mobile version