Site icon The Bangladesh Chronicle

দিল্লির দিনক্ষণের ওপর নির্ভর প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর

দিল্লির দিনক্ষণের ওপর নির্ভর প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর কোথায় তা নিয়ে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে চীন ও ভারত। জুলাইয়ের প্রথম দিকে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিকে প্রায় একই সময়ে ভারত সফরেরও আমন্ত্রণ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর দিল্লিতে হতে যাচ্ছে। এর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই চীন সফরের সময়ও চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।

গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, আগামী ৩ জুন বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) হবে। এ বৈঠকে যোগ দিতে চীন যাবেন মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠক শেষে তিনি ৪ জুন ঢাকা ফিরবেন। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এবারের দুই দেশের এফওসিতে মূলত প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করাসহ সই হতে পারে এমন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে চীনের অগ্রাধিকারের বিষয় বুঝতে চাইবে ঢাকা। একই সঙ্গে ঢাকার প্রত্যাশার বিষয়ও বেইজিংকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র সচিবের কাছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, প্রধানমন্ত্রীর সফর ও এফওসি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে জুনে এফওসি হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে আরও কিছু আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বেইজিংয়ের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হবে কিনা– এ প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়টি আজকের (রোববার) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আলোচনা হয়নি। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সংশ্লিষ্টদের কেউ ছিলেন না।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চীনের সঙ্গে চলমান প্রকল্পের হালনাগাদ অবস্থা তুলে ধরে। সেই সঙ্গে সামনের সফরে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোন কোন বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, বৈঠকে মূলত প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের দিনক্ষণের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। চীন সফরে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। কারণ আগে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে বর্তমানে নির্বাচন চলছে। জুন মাসের মধ্যে দেশটিতে নতুন সরকার গঠন হয়ে যাবে। তবে সে সময়ে আবার বাংলাদেশের বাজেট অধিবেশন চলে। সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে চীন সফরও চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীকে ভারত নাকি চীন আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, তা নিয়েও চলেছে আলোচনা। ভারত বলেছে, ঢাকার হাইকমিশনার প্রথমে দেখা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই রকম দাবি চীনের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। কর্মকর্তারা বলেন, দুই রাষ্ট্রদূত প্রায় একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘরে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী খুবই কাছাকাছি সময়ে দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই দেখা করেছেন। ফলে কোন দেশ আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, সেটি প্রধানমন্ত্রীই ভালো বলতে পারবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ৯ থেকে ১২ জুলাই চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে চীন সফরের আগে দিল্লির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। দিল্লি চাইছে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে শুক্রবার ধরে সফর যাতে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চাইছে বাজেট পাস হওয়ার পরে ২৮ জুনের দিকে সফর হতে পারে। বিষয়টি চূড়ান্ত করা নিয়ে কাজ করছে দুই দেশ। যদি কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর পিছিয়ে যায়, তবে চীন সফরও পেছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এর পর সফরের দিনক্ষণের বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অগ্রাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখন পর্যন্ত ভারত সফর নিয়ে দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপ্তি অনেক। প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রতিনিধিরা এসে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তাদের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও এ নিয়ে বৈঠক হবে।

গত এপ্রিলে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চীন সফরের দাওয়াত পৌঁছে দেন। আর চলতি মাসে ঢাকা সফর করে শেখ হাসিনার কাছে ভারত সফরের দাওয়াত পৌঁছে দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহোন কোয়াত্রা।

samakal

Exit mobile version