বাজারে হঠাৎ করেই মিলছিল না সয়াবিন তেল। বিশেষ করে দোকানগুলোতে টাকা দিয়েও মানুষ বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে না পারার অভিযোগ করছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হয়। এ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বাজারে বেড়েছে নতুন দরের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, মালিবাগসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। তেলের দেখা মিললেও চিনির ক্ষেত্রে স্বস্তি মেলেনি। দাম বাড়ানোর পরও চিনির সরবরাহ বাড়েনি। আর সংকট কাটিয়ে কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে আটার সরবরাহ। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে খুব একটা পৌঁছেনি নতুন দরের সয়াবিন তেল।

সরেজমিন কারওয়ান বাজারে কয়েকটি দোকানে একটি শীর্ষ ব্র্যান্ডের নতুন দরের তেলের বোতল দেখা যায়। অন্য কোম্পানির তেলও দু-এক দিনের মধ্যেই চলে আসবে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, হাতিরপুল, কাঁঠাল বাগান, তেজকুনিপাড়া, নাখালপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিলে দোকানিরা জানান, তাঁদের কাছে এখনও কোম্পানিগুলো নতুন দরের তেল সরবরাহ করেনি। তবে খোলা সয়াবিন তেল মোটামুটি সব জায়গায় কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং নতুন দর ১৭২ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে খোলা চিনি পাওয়া যায় এবং আগের মতোই ১১৫-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের জাকির জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, বাজারে কিছুটা বেড়েছে আটার সরবরাহ। তবে তেল ও চিনি এখনও দেয়নি কোম্পানিগুলো। শনি ও রোববারের মধ্যে তেল পাওয়া যেতে পারে। তবে চিনি পাওয়া এখনও অনিশ্চিত। কারওয়ান বাজারের আব্দুর রব স্টোরের কর্ণধার মো. নাঈম জানান, শুক্রবার নতুন দরের কিছু তেলের বোতল ঢুকেছে বাজারে। দু-এক দিনের মধ্যে সব কোম্পানির তেল চলে আসবে।
নাখালপাড়ার চাঁদপুর ট্রেডার্সের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘সব সময় দেখে আসছি, দাম বাড়ানোর আলোচনা হতেই পণ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। এবারও হঠাৎ করে সয়াবিন তেল নাই হয়ে গেল। দাম বাড়লে পণ্যের অভাব হয় না। দু-এক দিনের মধ্যেই সব কোম্পানির তেল, চিনি ও আটায় বাজার সয়লাব হয়ে যাবে।’
মহাখালী কাঁচাবাজারের মা জননী স্টোরের স্বত্বাধিকারী বিকাশ বণিক বলেন, ‘নতুন দরের তেল আসা শুরু হয়েছে। আজকালের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

কারওয়ান বাজারে সদাই করতে আসা নিউ ইস্কাটন রোডের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে দেরি হলেও নতুন দামের তেল আসতে দেরি হয়নি। এতে স্পষ্ট, কোম্পানিগুলো আগেই দাম বাড়িয়ে তেল বোতলজাত করেছে। দাম বাড়ানোর জন্যই এতদিন বাজারে তেল ছাড়েনি। কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। এটা ভোক্তার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।’
বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন এ দাম বৃদ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সায় দেওয়ার পর তা কার্যকর হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৭৮ টাকা। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২৫ টাকা, যা এতদিন মিলেছে ৮৮০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা লিটার। অন্যদিকে, প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৮ টাকা, যা আগে ছিল ৯৫ টাকা।