Site icon The Bangladesh Chronicle

দাপুটে জয়ে ভারত ফাইনালে

দাপুটে জয়ে ভারত ফাইনালেওয়ানডেতে নিজের ৫০তম সেঞ্চুরির পর বিরাট কোহলির উদযাপন। এদিন এক দিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি শতক করা শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যান তিনি। ছবি: এএফপি
যতক্ষণ ক্রিজে ড্যারেল মিচেল ছিলেন, ততক্ষণ একটা উদ্বেগাকুল বিষাদ ঘিরে ধরেছিল রোহিত শর্মাকে। আর এমন মুহূর্তে একজনকেই স্মরণ করে থাকেন ভারতীয় অধিনায়ক, তাঁর হাতেই অস্ত্রের মতো বল তুলে দেন। তিনি মোহাম্মদ শামি। যিনি আবারও প্রমাণ করলেন, অনাগত শুভ মুহূর্তের কল্পনায় কেবল তিনিই মুহুর্মুহু শিহরণ জাগাতে পারেন।

যেভাবে কাল সাত উইকেট শিকার করে ভারতকে এক যুগ পর বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেন, যেভাবে কাল বিরাট কোহলির রেকর্ড সেঞ্চুরির ম্যাচে দলের ভরসা হয়ে থাকলেন, তাতে শামিই ছিলেন এদিনের ‘মুম্বাইয়ের বাদশাহ’। চার উইকেটে ৩৯৭ রান তুলেও ভারতকে যে উৎকণ্ঠা তাড়া করেছিল নিউজিল্যান্ড, তা থেমে গিয়েছিল ৩২৭ রানে। তার কারণ, ম্যাচের প্রতিটি টার্নিং পয়েন্টে এসেই সফলতা এনে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি। ৭০ রানের বিশাল এই জয়ে নিশ্চিতভাবেই লেখা থাকবে তাঁর নাম।

আগের দিন পিচ দেখেই অনেকক্ষণ কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় রোহিত শর্মাকে। গতকাল ম্যাচ শুরুর আগে জানা যায়, শেষ মুহূর্তে রোহিতের অনুরোধে সাত নম্বর পিচ থেকে ছয় নম্বর পিচ তৈরি করা হয়েছে। এটা ছিল সেই পিচ, যেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯৯ রান তুলেছিল। ভারতও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই পিচে ৩৫৫ রান করেছিল। ওয়াংখেড়ের কিউরেটর সাত নম্বর পিচটা তৈরি রেখেছিলেন সেমিফাইনালের জন্য। এ কারণে সেখানে লিগ পর্বের কোনো ম্যাচ খেলানো হয়নি। কিন্তু ঘরের ছেলে রোহিত চেয়েছিলেন সেই চারশর ২২ গজ। সেখানে টস জিতে ব্যাটিং চেয়ে নিতে এতটুকু দেরি করেননি ভারত অধিনায়ক এবং শুভমন গিলকে নিয়ে শুরু থেকে বাউন্ডারির রাস্তা পরিষ্কার করতে থাকেন। উইকেটে পেসারদের জন্য ন্যূনতম কিছু না থাকায় অসহায়ের মতো দেখতে লাগে বোল্ট আর সাউদিকে। ফন্টফুটের নিখুঁত ব্যবহারে কিউই পেসারদের গতি কাজে লাগিয়ে তিন ওভারের মধ্যেই চার ছক্কা মারতে থাকেন। ৩২ বলে ৫০ রানের জুটি পেয়ে যায় ভারত। তবে সাউদির একটি স্লোয়ার তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান রোহিত। মিড অফ থেকে অনেকটা পেছনে দৌড়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন কেন উইলিয়ামসন।

মাঠ ছাড়তে ছাড়তেই বিরাটকে কিছু যেন বলে যান। সাধারণত ক্রিজে এসে রুদ্ধমূর্তি ধরতে দেখা যায় না বিরাটকে। এদিনও যেমন প্রথম চার বলের মধ্যেই তাঁর বিপক্ষে রিভিউ নেন কিউইরা।

সেখানে দেখা যায়, বল ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হয়ে যায়। ব্যস, সেখানেই ভয় কেটে যায় কোহলির। ভয় এই জন্যই বলা, এর আগে আইসিসির নকআউট ম্যাচগুলোতে কখনও হাফসেঞ্চুরিও ছিল না তাঁর। কিন্তু এদিন মুম্বাইয়ে বাদশাহর মতোই ওয়াংখেড়ে মাতালেন তিনি। ১৩ ওভারের মধ্যে দলকে শতরানের ঘরে পৌঁছে নিয়ে যান শুভমন গিল। কিউই পেসার লকি ফার্গুসনকে চার ছক্কায় অস্থির করে তোলেন তিনি। একমাত্র স্যান্টনার ছাড়া কোনো বোলারই কোহালি আর গিলকে আটকে রাখতে পারছিলেন না। অবশ্য মুম্বাইয়ে দুপুরের প্রচণ্ড গরম কাবু করে দেয় গিলকে। পায়ের পেশিতে টানা পরে তাঁর। এমনিতেই বিশ্বকাপের মাঝে ডেঙ্গুতে ভুগেছিলেন, সে কারণেই হয়তো তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি রোহিত। তাই ব্যক্তিগত ৭৯ রানে উঠে যান গিল।

আগমন শ্রেয়াস আয়ারের। আগের ম্যাচেই যিনি কিনা সেঞ্চুরি করেছেন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেই বিরাটের সঙ্গে শুধুই বাউন্ডারির নিশানা খুঁজতে থাকেন। এভাবেই নব্বইয়ের ঘরে এসে কিছুটা যেন নার্ভাস দেখা যায় কোহলিকে। একবার পুল করতে গিয়ে ক্র্যাম্পের মতো অস্বিস্তে ভুগতে দেখা যায় তাঁকে। আর সেভাবেই যখন সেঞ্চুরি করে বসেন, তখন গ্যালারিতে ‘পয়সা উশুল’-এর উল্লাস। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে শচীনের রেকর্ড ভেঙে তিনিই এখন সর্বোচ্চ ৫০টি সেঞ্চুরির মালিক। শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরি করতে লেগেছিল ৪৫২ ইনিংস, কোহলির সেখানে খেলতে হয়েছে ২৭৯ ইনিংস। ওয়ানডে আর টেস্ট মিলিয়ে শচীনের ১০০ সেঞ্চুরির পাশে কোহলি এখন আশি।

কোহলি সেঞ্চুরি পূরণের পর আউট হয়ে গেলে রানের গতিতে কিছুটা ছেদ পড়ে যেন। শ্রেয়াস আয়ারের সেঞ্চুরি, কেএল রাহুলের ছক্কার মাস্তানি সবই ছিল শেষ দিকে। কিন্তু কোথায় গিয়ে যেন চার শতাধিক রানের ইনিংসের আশা অপূরণ থেকে যায়।

যেটা বেশি মনে হয় ড্যারেল মিচেলের ১৩৪ রানের ইনিংস দেখে। একটা সময় যখন ৩০ ওভারের কাছাকাছি এসে নিউজিল্যান্ড ২০০ রান তুলে নেয়, তখনও খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না রোহিত। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে এবং তাঁর দলকে স্বস্তি আর আনন্দ দিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। ‘ক্যাচ ছাড়ার পর মনে হয়েছিল সুযোগ পেলে উইলিয়ামসনের উইকেটটি নেব।’ ম্যাচের পর খুশির ঝিলিক ধরা পড়ে শামির মুখে।

সমকাল

Exit mobile version