Site icon The Bangladesh Chronicle

থমথমে গাজীপুর-আশুলিয়া শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ

সাভার-আশুলিয়ায় ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সাভার-আশুলিয়ার ১৩০টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল আশুলিয়ার বাইপাইল, জামগড়া, ছয়তলা, বেরণ ও নরসিংহপুর এলাকার এসব কারখানার প্রধান গেটের সামনে বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে কাজে যোগ দিতে আসা গেটের সামনে শ্রমিকদের ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে ও আশেপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশ করে কাজ না করা, কারখানায় ভাঙচুরসহ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে শ্রম আইনের ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মূল ফটকে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

  গতকাল আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, বেরণ ও নরসিংহপুর এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি স্থানে শ্রমিকরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেও তারা সংখ্যায় ছিল খুবই অল্প।এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে একটি কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে শিল্প পুলিশের ডিআইজি মো. জাকির হোসেন খান বলেন, আন্দোলনে অন্তত ১২৩টি কারখানায় কমবেশি ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক আশুলিয়ায় ৫২টি আর কোনাবাড়ীতে ২৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে খুশির খবর হলো- আগের বন্ধ থাকা ৪৮টি কারখানা চালু করা হয়েছে। এগুলোতে ১৩ (১) ধারা কার্যকর ছিল না।

শ্রমিকরা কোনো প্রকার বিক্ষোভ করবে না এবং কাজ করবে-এমন শর্তে কারখানা চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আশুলিয়া থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বন্ধ হওয়া সবগুলো পোশাক কারখানাই বিজিএমইএ’র সদস্য। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এসব কারখানা বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বেরণ এলাকার শারমিন গ্রুপের এ.এম ডিজাইন, এনভয় গ্রুপের মানটা অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড, হলিউড গার্মেন্টস লিমিটেড, নরসিংহপুর এলাকার হামিম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকার টেক্সটাউন টিমিটেড ও অরনেট নিট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জামগড়া এলাকার দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, পাইয়োনওয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স ও আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ অধিকাংশ কারখানার গেটের সামনে বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘৯ই নভেম্বর সকাল ১০টায় এবং বিগত কয়েকদিন ধরে বেলা ১১টা ও বিকাল ৩টার সময় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বহিরাগত পোশাক শ্রমিকদের বেআইনিভাবে কারখানার ভেতর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা ভাঙচুর ও কারখানার কাজ বন্ধ রাখাসহ কর্মস্থলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় কারখানার উৎপাদন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১০ই নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলো।’

আঁখি আক্তার নামে বেরণ এলাকার হলিউড গার্মেন্টসের এক নারী শ্রমিক বলেন, কারখানা কবে খুলবে মালিকপক্ষ সেটা জানায়নি। এখন তারা যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নিক। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা যাই বেতন বাড়িয়ে কারখানা খুলে দিলে আমরা কাজে যোগ দেবো। আমরা তো কাজ করতে চাই। কারণ হেলপারের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু অপারেটরদের তো কোনো ডিসিশন দিচ্ছে না। এজন্য আমরা কাজ করিনি।

পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৩০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বেশ কিছু কারখানা ছুটিও দেয়া হয়েছে।

পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো. কবির হোসেন বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ শনিবার সকালে কারখানাগুলোর গেটে নোটিশ টানিয়ে কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোন প্রেক্ষাপটে বা কী কারণে কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তা আমরা পরিষ্কার নই। প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদেরই কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে। এভাবে কারখানা বন্ধ করে দিলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। তাই এই সমস্যা সমাধানে উভয়পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন অদক্ষ পোশাক কর্মীর ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২,৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা ১১৩.৬ ডলারের সমতুল্য। এর সঙ্গে ওভারটাইম ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা যোগ করে একজন অদক্ষ শ্রমিক গড়ে প্রায় ১৯ হাজার টাকা বাসায় নিতে পারবে (টেক হোম স্যালারি), যা প্রায় ১৭৩ ডলারের সমতূল্য। যেহেতু শিল্প বেড়ে উঠছে, তাই শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। তবে বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সহনশীলতা প্রদর্শনের অভাব বড়ই দৃশ্যমান!

মানব জমিন

Exit mobile version